গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী ও মুজিব নগর সরকার

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কিত বাছাই করা
২০০ টি প্রশ্ন ও উত্তর 



 
পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিন যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর আসে চুড়ান্ত বিজয়। স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আসুন জেনে নিই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কিত বাছাই করা ২০০ টি তথ্য।
 
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের সাংকেতিক নাম – উঃ অপারেশন সার্চ লাইট
প্রশ্ন : শেখ মজিবুর রহমানকে প্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় কখন?
উঃ ২৫ মার্চ, ১৯৭১ মধ্যরাতে।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে সমগ্র বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করেছিলেন?
উঃ ১১ টি।
প্রশ্ন : কোন সেক্টরে নিয়মিত কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না?
উঃ ১০ নং সেক্টর।
প্রশ্ন : স্বাধীনতা যুদ্ধে কত জন বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি লাভ করেন?
উঃ ৭ জন।
প্রশ্ন : স্বাধীনতা যুদ্ধে কত জন বীরউত্তম খেতাব লাভ করেন?
উঃ ৬৮ জন।
প্রশ্ন : স্বাধীনতা যুদ্ধে কত জন বীর বিক্রম উপাধি লাভ করে?
উঃ ১৭৫জন।
প্রশ্ন : স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্তির সংখ্যা কত?
উঃ ৪২৬ জন।
প্রশ্ন : স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য মোট কতজন খেতাব প্রাপ্ত হন?
উঃ ৬৭৬ জন।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের আত্মসমর্পণ দলিল কোথায় স্বাক্ষরিত হয়?
উঃ রেসকোর্স ময়দানে।
প্রশ্ন : জেনারেল এ, কে নিয়াজী কার নিকট আত্মসমর্পণ করে?
উঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার।
প্রশ্ন : আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে কে নেতৃত্ব প্রদান করেন?
উঃ বিমান বাহিনীর প্রধান কমোডর এ কে খন্দকার।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের আত্মসমর্পণ দলিল কোথায় স্বাক্ষরিত হয়?
উঃ রেসকোর্স ময়দানে।
প্রশ্ন : জেনারেল এ, কে নিয়াজী কার নিকট আত্মসমর্পণ করে?
উঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার।
প্রশ্ন : আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে কে নেতৃত্ব প্রদান করেন?
উঃ বিমান বাহিনীর প্রধান কমোডর এ কে খন্দকার।
প্রশ্ন : জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পের সময় পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনীর কত সংখ্যা ছিল ?
উঃ ৯৩ হাজার।
প্রশ্ন : কোন বীর শ্রেষ্ঠের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি?
উঃ বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন।
প্রশ্ন : কোন বীর শ্রেষ্ঠের কোন খেতাবী কবর নেই?
উঃ বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক কে ছিলেন?
উঃ বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন: প্রথম কোথায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়?
উঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রসভায়।
প্রশ্ন: প্রথম কবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয ?
উঃ ০২ ই মার্চ, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের পতাকা কে প্রথম উত্তোলন করেন?
উঃ আ স ম আব্দুর রব।
প্রশ্ন: কবে, কোথায় স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়?
উঃ ০৩ মার্চ, ১৯৭১, পল্টন ময়দানে।
প্রশ্ন: চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করা হয় ?
উঃ ২৬ মার্চ, ১৯৭১।
প্রশ্ন: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কবে, কোথায় স্থাপন করা হয়?
উঃ চট্টগ্রামের কালুরঘাটে, ২৬ মার্চ, ১৯৭১।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন কারা?
উঃ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ কবে, কোথায় সংগঠিত হয়?
উঃ ১৯ মার্চ, ১৯৭১ গাজিপুরে।
প্রশ্ন: শেখ মুজিব কত তারিখে পাকিস্তানের কারাগার হতে মুক্তিলাভ করেন ?
উঃ ১০ জানুয়ারী ১৯৭২।
প্রশ্ন: এ দেশের মাটি চাই, মানুষ নয়- এ উক্তি কার?
উঃ জেনারেল ইয়াহিয়া খান।
প্রশ্ন: সর্বপ্রথম কবে বাংলাদেশের স্বাধীন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়?
উঃ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার কবে গঠিত হয়েছিল?
উঃ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশকে প্রজাতন্ত্র ঘোষনা করা হয়েছিল কবে?
উঃ ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার কবে শপথ গ্রহন করেছিল?
উঃ ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের সদস্য সংখ্যা কত ছিল?
উঃ ৬ জন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাজধানী কোথায় ছিল?
উঃ মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে।
প্রশ্ন: মুজিবনগরের পুরাতন নাম কি ছিল?
উঃ বৈদ্যনাথ তলার ভবের পাড়া।
প্রশ্ন: কে বৈদ্যনাথ তলার নাম মুজিব নগর রাখেন?
উঃ তাজউদ্দিন আহম্মেদ।
প্রশ্ন: মুজিনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন কে?
উঃ এম, মনসুর আলী।
প্রশ্ন: মুজিনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রি ছিলেন কে?
উঃ তাজউদ্দিন আহম্মেদ।
প্রশ্ন: মুজিনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
উঃ শেখ মুজিবর রহমান।
প্রশ্ন: মুজিনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
উঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
প্রশ্ন: মুজিনগরে নতুন সরকার গঠনের ঘোষনাপত্র পাঠ করেন?
উঃ অধ্যাপক ইউসুফ আলী।
প্রশ্ন: মুজিনগরে সরকারকে প্রথম গার্ড অনার কে প্রদান করেন?
উঃ মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)
প্রশ্ন: জেনারেল ওসমানী কবে বাংলাদেশের সেনা প্রধান নিযুক্ত হন?
উঃ ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রথম বিমান বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন?
উঃ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।
প্রশ্ন: প্রথম কোন বাংলাদেশী কূটনীতিক দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন?
উঃ এম হোসেন আলী।
প্রশ্ন: সাইমন ড্রিং কে ছিলেন?
উঃ ১৯৭১ সালে ঢাকায় কর্মরত ব্রিটিশ সাংবাদিক। যিনি সর্বপ্রথম পাকিস্থানী বর্বরতার কথা বর্হিবিশ্বে প্রকাশ করেন। তিনি পরবর্তীতে একুশে টেলিভিশনের পরিচালক ছিলেন।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন বিদেশী মিশনে বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়?
উঃ ১৮ এপ্রিল কলকতায়।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে সমগ্র বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করেছিলেন?
উঃ ১১ টি।
প্রশ্ন: কোন সেক্টরে নিয়মিত কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না?
উঃ ১০ নং সেক্টর।
বিসিএস সহ সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ও সফল ব্যাক্তিদের পরামর্শ পেতে এখানে ক্লিক করে আমাদের OFFICIAL ফেসবুক GROUP এ “JOIN করে নাও” ।
 
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে কত জন বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি লাভ করেন?
উঃ ৭ জন।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে কত জন বীরউত্তম খেতাব লাভ করেন?
উঃ ৬৮ জন।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে কত জন বীর বিক্রম উপাধি লাভ করে?
উঃ ১৭৫জন।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্তির সংখ্যা কত?
উঃ ৪২৬ জন।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য মোট কতজন খেতাব প্রাপ্ত হন?
উঃ ৬৭৬ জন।
প্রশ্ন: কোন বীর শ্রেষ্ঠের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি?
উঃ বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন।
প্রশ্ন: কোন বীর শ্রেষ্ঠের কোন খেতাবী কবর নেই?
উঃ বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন।
প্রশ্ন: বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবর কোথায় ছিল?
উঃ পাকিস্তানের করাচীর মাশরুর বিমান ঘাটিতে।
প্রশ্ন: কোন বীর শ্রেষ্ঠের কবর বাংলাদেশে ছিল না?
উঃ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের।
প্রশ্ন: বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কবর কোথায় ছিল?
উঃ ভারতের আমবাসা এলাকায়।
প্রশ্ন: দুইজন খেতাবধারী মহিলা মুক্তিযোদ্ধার নাম কি ?
উঃ ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম ও তারামন বিবি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একজন ইতালীর নাগরিক মৃত্যুবরণ করেন তার নাম কি ছিল?
উঃ মাদার মারিও ভেরেনজি।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত একমাত্র বিদেশী কে?
উঃ এ এস ঔডার ওয়াডারল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া। তাকে কেন বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়েছিল বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে সর্বকনিষ্ঠ খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা কে?
উঃ শহীদুল ইসলাম(লালু) বীর প্রতীক।
প্রশ্ন: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী গঠন করা হয় কবে?
উঃ ২১ নভেম্বর, ১৯৭১।
প্রশ্ন: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী কবে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে?
উঃ ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১।
প্রশ্ন: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের সেনাধ্যক্ষ কে ছিলেন?
উঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
প্রশ্ন: কোন সাহিত্যক মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব লাভ করেন?
উঃ আবদুস সাত্তার।
প্রশ্ন: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরমপত্র নামক কথিকা কে পাঠ করতেন?
উঃ এম আর আখতার মুকুল।
প্রশ্ন: ২৬ মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা করা হয় কখন?
উঃ ১৯৮০ সালে।
প্রশ্ন: বীর শ্রেষ্ঠদের মধ্যে প্রথম মৃত্য বরণ কে করেন?
উঃ মোস্তফা কামাল (৮ এপ্রিল, ১৯৭১)।
প্রশ্ন: বীর শ্রেষ্ঠদের মধ্যে সর্বশেষে মৃত্য বরণ কে করেন?
উঃ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১)।
প্রশ্ন: একমাত্র বীর বিক্রম খেতাবধারী আদিবাসী/উপজাতী মুক্তিযোদ্ধা কে ছিলেন?
উঃ উক্যাচিং মারমা।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক কে ছিলেন?
উঃ বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন: প্রথম কোথায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়?
উঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রসভায়।
প্রশ্ন: প্রথম কবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয ?
উঃ ০২ ই মার্চ, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের পতাকা কে প্রথম উত্তোলন করেন?
উঃ আ স ম আব্দুর রব।
প্রশ্ন: কবে, কোথায় স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়?
উঃ ০৩ মার্চ, ১৯৭১, পল্টন ময়দানে।
প্রশ্ন: চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করা হয় ?
উঃ ২৬ মার্চ, ১৯৭১।
প্রশ্ন: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কবে, কোথায় স্থাপন করা হয়?
উঃ চট্টগ্রামের কালুরঘাটে, ২৬ মার্চ, ১৯৭১।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন কারা?
উঃ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ কবে, কোথায় সংগঠিত হয়?
উঃ ১৯ মার্চ, ১৯৭১ গাজিপুরে।
প্রশ্ন: শেখ মজিবুর রহমানকে প্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় কখন?
উঃ ২৫ মার্চ, ১৯৭১ মধ্যরাতে।
প্রশ্ন: শেখ মুজিব কত তারিখে পাকিস্তানের কারাগার হতে মুক্তিলাভ করেন ?
উঃ ১০ জানুয়ারী ১৯৭২।
প্রশ্ন: এ দেশের মাটি চাই, মানুষ নয়- এ উক্তি কার?
উঃ জেনারেল ইয়াহিয়া খান।
প্রশ্ন: সর্বপ্রথম কবে বাংলাদেশের স্বাধীন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়?
উঃ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার কবে গঠিত হয়েছিল?
উঃ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশকে প্রজাতন্ত্র ঘোষনা করা হয়েছিল কবে?
উঃ ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার কবে শপথ গ্রহন করেছিল?
উঃ ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের সদস্য সংখ্যা কত ছিল?
উঃ ৬ জন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাজধানী কোথায় ছিল?
উঃ মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে।
প্রশ্ন: মুজিবনগরের পুরাতন নাম কি ছিল?
উঃ বৈদ্যনাথ তলার ভবের পাড়া।
প্রশ্ন: কে বৈদ্যনাথ তলার নাম মুজিব নগর রাখেন?
উঃ তাজউদ্দিন আহম্মেদ।
প্রশ্ন: মুজিনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন কে?
উঃ এম, মনসুর আলী।
প্রশ্ন: মুজিনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রি ছিলেন কে?
উঃ তাজউদ্দিন আহম্মেদ।
প্রশ্ন: মুজিনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
উঃ শেখ মুজিবর রহমান।
প্রশ্ন: মুজিনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
উঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
প্রশ্ন: মুজিনগরে নতুন সরকার গঠনের ঘোষনাপত্র পাঠ করেন?
উঃ অধ্যাপক ইউসুফ আলী।
প্রশ্ন: মুজিনগরে সরকারকে প্রথম গার্ড অনার কে প্রদান করেন?
উঃ মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)
প্রশ্ন: জেনারেল ওসমানী কবে বাংলাদেশের সেনা প্রধান নিযুক্ত হন?
উঃ ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১।
বিসিএস সহ সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ও সফল ব্যাক্তিদের পরামর্শ পেতে এখানে ক্লিক করে আমাদের OFFICIAL ফেসবুক GROUP এ “JOIN করে নাও” ।
 
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রথম বিমান বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন?
উঃ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।
প্রশ্ন: প্রথম কোন বাংলাদেশী কূটনীতিক দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন?
উঃ এম হোসেন আলী।
প্রশ্ন: সাইমন ড্রিং কে ছিলেন?
উঃ ১৯৭১ সালে ঢাকায় কর্মরত ব্রিটিশ সাংবাদিক। যিনি সর্বপ্রথম পাকিস্থানী বর্বরতার কথা বর্হিবিশ্বে প্রকাশ করেন। তিনি পরবর্তীতে একুশে টেলিভিশনের পরিচালক ছিলেন।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন বিদেশী মিশনে বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়?
উঃ ১৮ এপ্রিল কলকতায়।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে সমগ্র বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করেছিলেন?
উঃ ১১ টি।
প্রশ্ন: কোন সেক্টরে নিয়মিত কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না?
উঃ ১০ নং সেক্টর।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে কত জন বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি লাভ করেন?
উঃ ৭ জন।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে কত জন বীরউত্তম খেতাব লাভ করেন?
উঃ ৬৮ জন।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে কত জন বীর বিক্রম উপাধি লাভ করে?
উঃ ১৭৫জন।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্তির সংখ্যা কত?
উঃ ৪২৬ জন।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য মোট কতজন খেতাব প্রাপ্ত হন?
উঃ ৬৭৬ জন।
প্রশ্ন: সম্প্রতি কোন বীর শ্রেষ্ঠের কবর পাকিস্তান থেকে দেশে এনে সমাহিত করা হয়েছে?
উঃ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান।
প্রশ্ন: বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবর কোথায় ছিল?
উঃ পাকিস্তানের করাচীর মাশরুর বিমান ঘাটিতে।
প্রশ্ন: কোন বীর শ্রেষ্ঠের কবর বাংলাদেশে ছিল না?
উঃ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের।
প্রশ্ন: বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কবর কোথায় ছিল?
উঃ ভারতের আমবাসা এলাকায়।
প্রশ্ন: দুইজন খেতাবধারী মহিলা মুক্তিযোদ্ধার নাম কি ?
উঃ ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম ও তারামন বিবি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একজন ইতালীর নাগরিক মৃত্যুবরণ করেন তার নাম কি ছিল?
উঃ মাদার মারিও ভেরেনজি।
প্রশ্ন: স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত একমাত্র বিদেশী কে?
উঃ হোসাইল হেমার ওয়াডার ওয়াডারল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে সর্বকনিষ্ঠ খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা কে?
উঃ শহীদুল ইসলাম(লালু) বীর প্রতীক।
প্রশ্ন: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী গঠন করা হয় কবে?
উঃ ২১ নভেম্বর, ১৯৭১।
প্রশ্ন: কোন সাহিত্যক মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব লাভ করেন?
উঃ আবদুস সাত্তার।
প্রশ্ন: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরমপত্র নামক কথিকা কে পাঠ করতেন?
উঃ এম আর আখতার মুকুল।
প্রশ্ন: বীর শ্রেষ্ঠদের মধ্যে প্রথম মৃত্য বরণ কে করেন?
উঃ মোস্তফা কামাল (৮ এপ্রিল, ১৯৭১)।
প্রশ্ন: বীর শ্রেষ্ঠদের মধ্যে সর্বশেষে মৃত্য বরণ কে করেন?
উঃ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১)।
প্রশ্ন: একমাত্র বীর বিক্রম খেতাবধারী আদিবাসী/উপজাতী মুক্তিযোদ্ধা কে ছিলেন?
উঃ উক্যাচিং মারমা।
প্রশ্ন: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী কবে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে?
উঃ ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১।
প্রশ্ন: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের সেনাধ্যক্ষ কে ছিলেন?
উঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
প্রশ্ন: পাকিস্তানের পক্ষে কে আত্মসমর্পন করেন?
উঃ জেনারেল এ, কে নিয়াজী
প্রশ্ন: শেখ মুজিব ছয় দফা কর্মসুচী কবে ব্যক্ত করেন?
উঃ ১৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬ সালে।
প্রশ্ন: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়?
উঃ জানুয়ারী, ১৯৬৮।
প্রশ্ন: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিশেষ আদালতের বিচারক ছিলেন?
উঃ পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এস.এ. রহমান।
প্রশ্ন: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার হয়?
উঃ জুন, ১৯৬৮।
প্রশ্ন: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী কত জন ছিল?
উঃ ৩৫ জন।
প্রশ্ন: ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলার প্রধান আসামী ছিলেন?
উঃ শেখ মুজিবর রহমান।
প্রশ্ন: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কবে প্রত্যাহার করা হয়?
উঃ ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯।
প্রশ্ন: কবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করে?
উঃ ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯।
প্রশ্ন: আইয়ুব খান কবে কেন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়?
উঃ ২৫ মার্চ, ১৯৬৯ সালে। রাজনৈতিক সংকটের জন্য।
প্রশ্ন: পুলিশের গুলিতে শহীদ আসাদ কবে নিহত হন?
উঃ ২০ জানুয়ারী, ১৯৬৯।
প্রশ্ন: তিনি কোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগের ছাত্র ছিলেন?
উঃ আইন বিভাগের।
প্রশ্ন: পুলিশের গুলিতে শহীদ মতিউর কবে নিহত হন?
উঃ ২৪ জানুয়ারী, ১৯৬৯।
প্রশ্ন: তিনি কোন বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন?
উঃ নবকুমার ইনষ্টিটিউশনের, নবম শ্রেনীর ছাত্র।
প্রশ্ন: শহীদ ড. শামসুজ্জোহা কবে কোথায় হত্যা করা হয়েছিল?
উঃ ১৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে।
প্রশ্ন: আইয়ুব খান কবে কার নিকট পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর করেন?
উঃ ২৫ মার্চ, ১৯৬৯। আগা মুহম্মদ ইয়াহিয়া খান।
প্রশ্ন: শেখ মুজিবর রহমানকে কবে বঙ্গবন্ধুকে উপাধিতে ভুষিত করা হয়?
উঃ ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী।
প্রশ্ন: কখন শেখ মুজিবর রহমানকে জাতির জনক ঘোষনা দেয়া হয়?
উঃ ০৩ মার্চ ১৯৭১।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে প্রথমে জাতির পিতা ঘোষনা দেন?
উঃ আ.স.ম আবদুর রব।
প্রশ্ন: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের কয়টি আসন পেয়েছিল?
উঃ ১৬৭ টি আসন।
প্রশ্ন: পাকিস্তানের প্রথম সাধারন নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হয়?
উঃ ০৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০সাল।
প্রশ্ন: আলোচনা ভেঙ্গে দিয়ে ইয়াহিয়া খান কবে ঢাকা ত্যাগ করেন?
উঃ ২৫ মার্চ, ১৯৭১ রাতে।
প্রশ্ন: শেখ মুজিব ছয় দফা কর্মসুচী কবে ব্যক্ত করেন?
উঃ ১৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬ সালে।
বিসিএস সহ সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ও সফল ব্যাক্তিদের পরামর্শ পেতে এখানে ক্লিক করে আমাদের OFFICIAL ফেসবুক GROUP এ “JOIN করে নাও” ।
 
প্রশ্ন: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়?
উঃ জানুয়ারী, ১৯৬৮।
প্রশ্ন: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিশেষ আদালতের বিচারক ছিলেন?
উঃ পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এস.এ. রহমান।
প্রশ্ন: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার হয়?
উঃ জুন, ১৯৬৮।
প্রশ্ন: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী কত জন ছিল?
উঃ ৩৫ জন।
প্রশ্ন: ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলার প্রধান আসামী ছিলেন?
উঃ শেখ মুজিবর রহমান।
প্রশ্ন:বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি তথা জাতির জনকের নাম কী? উঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন:বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা কোন সেক্টরের অধীনে ছিলো? উত্তরঃ দুই নম্বর সেক্টর
প্রশ্ন:অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনাকারী কে ছিল? উত্তর : ইয়াহিয়া খান
প্রশ্ন:সর্ব কনিষ্ঠ খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধার নাম কী? উঃ শহীদুল ইসলাম (বীর প্রতীক ১২ বছর)
প্রশ্ন:৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত লোকসংক্ষা কত ছিলো? উত্তরঃ প্রায় দশ লক্ষ
প্রশ্ন:মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান কে? উত্তরঃ এম. মনসুর আলি।
প্রশ্ন:সরকারিভাবে নিয়মিত বাহিনির নাম কী ছিলো? উত্তরঃ এম. এফ
প্রশ্ন:রাজাকার বাহিনি গঠন করেন কে? উত্তরঃ মওলানা এ কে এম ইউসুফ
প্রশ্ন:১৯৭১ এ ভারতীয় বিমান ঘাটিতে পাকিস্তান বোমা হামলা চালায় কবে? উত্তরঃ ৩রা নভেম্বর
প্রশ্ন:মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ঢাকার কোন এলাকায় অবস্থিত? উত্তরঃ সেগুনবাগিচা
প্রশ্ন:কোন নেতা নির্বাচিত দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর বানচাল করতে ইয়াহিয়া খানের সাথে ষড়যন্ত্র করেন? উত্তরঃ জুলফিকার আলী ভুট্ট
প্রশ্ন:মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি কে নিযুক্ত হন? উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
প্রশ্ন:মুক্তিবাহিনী কবে গঠিত হয়? উত্তর: ১৯৭১ সালের ১১ জুলাই
প্রশ্ন:মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়? উত্তর: ১১টি সেক্টরে
প্রশ্ন:শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে পালন করা হয়? উত্তর: ১৪ ডিসেম্বর
প্রশ্ন:মুক্তিযুদ্ধে কত লোক প্রাণ হারায়? উত্তর: প্রায় ৩০ লাখ
প্রশ্ন:মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক উপাধি কয়টি? উত্তর: চারটি
প্রশ্ন:মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রিয় ধ্বনি ছিল কোনটি? উত্তর: ‘জয় বাংলা’।
প্রশ্ন:যৌথবাহিনী গঠিত হয়েছিল কবে? উত্তর: ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর
প্রশ্ন:বাংলার মুক্তি সনদ’ হিসেবে কি পরিচিত? উত্তরঃ ৭ই মার্চের ভাষন
প্রশ্ন:সম্প্রতি কোন দেশে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’? উত্তরঃ আইভরি কোস্ট
প্রশ্ন:কে ভারত থেকে আত্মসমর্পন দলিল নিয়ে আসেন? উত্তরঃ মেজর জেনারেল জ্যাকব
প্রশ্ন:১৯৭১ সালে ২২শে মার্চ আলোচনার উদ্দেশ্যে ঢাকা আগমন কোন নেতার সাথে সম্পৃক্ত? উত্তরঃ জুলফিকার আলী ভুট্টো
প্রশ্ন:মুক্তিযুদ্ধের সময় বহির্বিশ্বে জনমত তৈরিতে কার নাম জড়িত? উত্তরঃ বিচারপতি আবু সায়িদ চৌধুরী
প্রশ্ন:মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাদুঘর গৌরবাঙ্গন, শ্বাশ্বত বাংলা এবং ভাস্মর চেতন’ কোথায় অবস্থিত? উত্তরঃ যশোর, রংপুর ও ময়মনসিংহ সেনানিবাস
প্রশ্ন:এম. ভি. সোয়াত চট্টগ্রামে পৌছে কত তারিখে? উত্তরঃ ৩রা মার্চ
প্রশ্ন:অপারেশন জ্যাকপটে মোট কতটি পাকিস্তানী জাহাজ ধ্বংস করে? উত্তরঃ ৬০ টি
প্রশ্ন:আভ্যন্তরীণ নৌপথ ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল চালনা কোন সেক্টরের অন্তভু‌র্ক্ত ছিল? উত্তরঃ ১০নং সেক্টরে
প্রশ্ন: শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যিদ্ধে জয়লাভের জন্য মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা নানা ধরণের কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। এর মধ্যে প্রধান কৌশল ছিল কোনটি? উত্তরঃ গেরিলা আক্রমন ও সন্মুখ যুদ্ধ
প্রশ্ন:শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে কবে ছয়দফা ঘোষনা করেন? উ: ২৩ মার্চ ১৯৬৬
প্রশ্ন:মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে কে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন? উত্তরঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম
প্রশ্ন:‘কে’ ফোর্সের অধিনায়ক কে ছিলেন? উত্তরঃ মেজর খালেদ মোশারফ
প্রশ্ন:মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত বাহিনী কোনটি ছিলো? উত্তরঃ মুক্তিফৌজ
প্রশ্ন:কবে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির জনক’ ঘোষনা করা হয় ? উ: ৩ মার্চ ১৯৭
প্রশ্ন:কত তারিখে বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়? উত্তরঃ ৭ই মার্চ ১৯৭৩
প্রশ্ন:বাংলাদেশের গণপ্রজাতন্ত্রের ঘোষণা হয়েছিল? উত্তরঃ ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১
প্রশ্ন:মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান কে ছিলেন ? উত্তরঃ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
প্রশ্ন:বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শত্রুমুক্ত জেলার নাম – উত্তরঃ যশোর
প্রশ্ন:মুজিবনগর সরকার কোন দেশে মিশন স্থাপন করেছিলো? উত্তরঃ যুক্তরাজ্য
প্রশ্ন:কখন মুক্তিযুদ্ধের বিরধিতাকারী মালিক মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন? উত্তরঃ১৪ই ডিসেম্বর
প্রশ্ন:শরনার্থী কর আইন আরোপ করেছে কোন সরকার? উত্তরঃ ভারত সরকার
প্রশ্ন:মার্ক টলী কোন সংবাদ মাদ্যমের সাংবাদিক? উত্তরঃ বিবিসি
প্রশ্ন:বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘বীরপ্রতীক’ খেতাব লাভকারী একমাত্র বিদেশী নাগরিক কোন দেশের? ? উত্তরঃ ডাচ
প্রশ্ন:মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিগেড আকারে মোট কয়টি ফোর্স গঠিত হয়েছিল ? উত্তরঃ ৩ টি
প্রশ্ন:আত্মসমর্পনের পরে পাকিস্তানী দের যুদ্ধবন্দি হিসেবে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়? উত্তরঃ ঢাকা সেনানিবাসে।

বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার
 
মুজিবনগর সরকার
১৯৭১–১৯৭২
মুজিবনগর সরকারের জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
মুজিবনগর সরকারের অবস্থান
অবস্থা অস্থায়ী সরকার
রাজধানী বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান মুজিবনগর)
নির্বাসনে রাজধানী কলকাতা
প্রচলিত ভাষা বাংলা
সরকার অস্থায়ী প্রজাতন্ত্র
রাষ্ট্রপতি  
প্রধানমন্ত্রী  
 
• ১৯৭১–১৯৭২
তাজউদ্দীন আহমদ
ঐতিহাসিক যুগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
 
• প্রতিষ্ঠা
১৭ই এপ্রিল ১৯৭১
• বিলুপ্ত
১২ই জানুয়ারি ১৯৭২
 
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
পূর্ব পাকিস্তান
বাংলাদেশ

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলাকে রাজধানী করে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর)শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়।ফলে পৃথিবীর বুকে নতুন একটি মানচিএের সূচনা হয়।

পেছনের কথা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইট সংঘটিত হবার সময় যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে পাকিস্তানী বাহিনী গ্রেফতার করে তার আগ মুহূর্তে ২৫ মার্চ দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ইপিআর এর একটি ছোট ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।[১] এরপর ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র হতে মেজর জিয়াউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন।[২][৩] মূলত সেই দিন হতেই বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

এদিকে ২৫ মার্চের ভয়াবহ, দুর্বিষহ গণহত্যার সময় আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান নেতা তাজউদ্দীন আহমদ নিজ বাসভবন ছেড়ে পালিয়ে যান।[৩] এসময়েই তিনি বাংলাদেশ সরকার গঠনের পরিকল্পনা শুরু করেন। প্রথমে আত্মরক্ষা তারপর প্রস্তুতি এবং সর্বশেষে পালটা আক্রমণ এই নীতিকে সাংগঠনিক পথে পরিচালনার জন্য তিনি সরকার গঠনের চিন্তা করতে থাকেন। এরই মধ্যে ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় তিনি ফরিদপুর-কুষ্টিয়া পথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে পৌছান।[৪] ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ মার্চ মেহেরপুর সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পদার্পণ করেন। সীমান্ত অতিক্রম করার বিষয়ে মেহেরপুরের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী তাদের সার্বিক সহায়তা করেন। সীমান্ত অতিক্রম করার পর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিদর্শক গোলক মজুমদার তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। গোলক মজুমদারের কাছে সংবাদ পেয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক কেএফ রুস্তামজী তাদের আশ্রয়স্থলে এবং তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন এবং পূর্ববাংলা সার্বিক পরিস্থিতি এবং বাঙালির স্বাধীনতা লাভের অদম্য স্পৃহা সম্পর্কে সম্যক অবগত হন। সীমান্তে পৌছে তাজউদ্দীন দেখেন যে বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সেনাদের সমর্থনে ভারত সরকার থেকে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত ভারতীয় সামরিক বাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছুই করার নেই। মুক্তিফৌজ গঠনের ব্যপারে তাজউদ্দীন আহমদ বিএসএফ এর সাহায্য চাইলে তৎকালীন বিএসএফ প্রধান তাকে বলেন যে মুক্তিসেনাদের ট্রেনিং এবং অস্ত্র প্রদান সময় সাপেক্ষ কাজ । তিনি আরো বলেন যে ট্রেনিংয়ের বিষয়ে তখন পর্যন্ত ভারত সরকারের কোন নির্দেশ না থাকায় তিনি মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিতে পারবেন না। কেএফ রুস্তামজী দিল্লির ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে জানানো হয় তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে নিয়ে দিল্লি যাওয়ার জন্য।[৫] উদ্দেশ্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং তাজউদ্দীন আহমদের বৈঠক। দিল্লিতে পৌছানোর পর ভারত সরকার বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হন যে, তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠতম সহকর্মী। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের আগে ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাজউদ্দিন আহমদের কয়েক দফা বৈঠক হয় এবং তিনি তাদের বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার জন্য যেসব সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন তা বুঝিয়ে বলেন। এসময় তিনি উপলব্ধি করেন যে আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে তিনি যদি সাক্ষাৎ করেন তবে সামান্য সহানুভূতি ও সমবেদনা ছাড়া তেমন কিছু আশা করা যায় না। সরকার গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঐ সরকারের দৃঢ় সমর্থন ছাড়া বিশ্বের কোন দেশই বাংলাদেশের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে না। এছাড়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের আগের দিন এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাজউদ্দীনের কাছে জানতে চান যে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে কোনো সরকার গঠিত হয়েছে কিনা। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি রূপে নিজেকে তুলে ধরবেন। কারণ এতে 'পূর্ব বাংলার জনগণের সংগ্রামকে সাহায্য করার জন্য ৩১ মার্চ ভারতীয় পার্লামেন্টে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়'[৬] তা কার্যকর রূপ লাভ করতে পারে বলে তাজউদ্দীনের ধারণা হয়। ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠকের সূচনাতে তাজউদ্দীন জানান যে পাকিস্তানী আক্রমণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ২৬ মার্চেই বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করে সরকার গঠন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রেসিডেন্ট এবং মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকে যোগদানকারী সকল প্রবীণ সহকর্মীই মন্ত্রিসভার সদস্য। শেখ মুজিবের গ্রেফতার ছাড়া তখন পর্যন্ত দলের অন্যান্য প্রবীণ নেতাকর্মীর খবর অজানা থাকায় সমাবেত দলীয় প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শক্রমে দিল্লীর উক্ত সভায় তাজউদ্দীন নিজেকে প্রধানমন্ত্রী রূপে তুলে ধরেন।[৪][৭] । ঐ বৈঠকে তাজউদ্দীন আহমদ ইন্দিরা গান্ধীর কাছে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য অনুরোধ করেন। ইন্দিরা গান্ধী তাকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, উপযুক্ত সময়ে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হবে। এভাবেই অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের ধারনার সূচনা।

আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠন

ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠক শেষে তিনি বাংলাদেশকে সর্বপ্রকার সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলে তাজউদ্দীন আহমদ আওয়ামী লীগের এমএনএ (M.N.A) এবং এমপিএদের (M.P.A) কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তে অধিবেশন আহ্বান করেন।

 
১৯৭১ সালের ১৭ ই এপ্রিল অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান

উক্ত অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়।[৮][৯] এই মন্ত্রিপরিষদ এবং এমএনএ ও এমপিএগণ ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক করে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপ্রধান এবং বঙ্গন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের অস্থায়ী সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী,ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী (অর্থ মন্ত্রণালয়),খন্দকার মোশতাক আহমেদ (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়) ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান(স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয়) কে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নিয়োগ করা হয়। ১১ এপ্রিল এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ বেতারে মন্ত্রিপরিষদ গঠনের ঘোষণা দিয়ে ভাষণ প্রদান করেন। [৮][১০]

 
১৯৭১ সালের অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দের ভাস্কর্য

এরপর ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে 
বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে মন্ত্রিপরিষদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সকাল ৯ টা থেকেই সেখানে নেতৃবৃন্দ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের আগমন শুরু হয়। দেশি বিদেশি প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন[১১]। বেলা ১১টায় শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। কোরআন তেলাওয়াত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় এবং শুরুতেই বাংলাদেশকে 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ' রূপে ঘোষণা করা হয়। এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি একে একে প্রধানমন্ত্রী ও তার তিন সহকর্মীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর নতুন রাষ্ট্রের মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্নেল এম এ জি ওসমানী এবং মুক্তিবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রব এবং মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ উইং কমান্ডার আবদুল করিম খন্দকার এর নাম ঘোষণা করেন[১২]। এরপর সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। এই ঘোষণাপত্র এর আগেও ১০ এপ্রিল প্রচার করা হয় এবং এর কার্যকারিতা ঘোষণা করা হয় ২৬ই মার্চ ১৯৭১ থেকে। ঐদিন থেকে ঐ স্থানের নাম দেয়া হয় মুজিবনগর[১১]। ঐ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই বক্তব্য পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। ভাষণের শেষাংশে তিনি বলেন,

বিশ্ববাসীর কাছে আমরা আমাদের বক্তব্য পেশ করলাম, বিশ্বের আর কোন জাতি আমাদের চেয়ে স্বীকৃতির বেশি দাবিদার হতে পারে না। কেননা, আর কোন জাতি আমাদের চাইতে কঠোরতর সংগ্রাম করেনি। অধিকতর ত্যাগ স্বীকার করেনি। জয়বাংলা।

[১২] অর্থাৎ এর মধ্যদিয়েই প্রধানমন্ত্রী দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানালেন[১৩] আর এভাবেই মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সূচনা হল।[১৪]

অস্থায়ী সরকারের গঠন

রাষ্ট্রপতিবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী)

উপরাষ্ট্রপতিসৈয়দ নজরুল ইসলাম (রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন)

প্রধানমন্ত্রীতাজউদ্দীন আহমদ

মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীগণ

নং মন্ত্রণালয়সমূহের নাম [৮]
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
. পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়।
সাধারণ প্রশাসন বিভাগ।
স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়।
১০ সংসদ বিষয়ক বিভাগ।
১১ কৃষি বিভাগ।
১২ প্রকৌশল বিভাগ।
নং মন্ত্রীর নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়[৮]
তাজউদ্দীন আহমদ
ক- প্রধানমন্ত্রী খ- প্রতিরক্ষা

গ- তথ্য ও বেতার এবং টেলিযোগাযোগ

ঘ- অর্থনৈতিক বিষয়, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন

ঙ- শিক্ষা,স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ

চ- সংস্থাপন ও প্রশাসন

ছ- যেসব বিষয়ের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদের অন্য কোন সদস্যকে প্রদান করা হয়নি

খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক- পররাষ্ট্র বিষয় খ- আইন ও সংসদ বিষয়
এম মনসুর আলী
ক- অর্থ ও জাতীয় রাজস্ব খ- বাণিজ্য ও শিল্প

গ- পরিবহন

এ এইচ এম কামারুজ্জামান
ক- স্বরাষ্ট্র বিষয়ক খ- সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন

গ- কৃষি

মন্ত্রণালয়ের বাইরে আরো কয়েকটি সংস্থা ছিল যারা সরাসরি মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে কাজ করত। যেমনঃ

  1. - পরিকল্পনা কমিশন
  2. - শিল্প ও বাণিজ্য বোর্ড
  3. - নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, যুব ও অভ্যর্থনা শিবির
  4. - ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি
  5. - শরণার্থী কল্যাণ বোর্ড ।[৮]

উপরাষ্ট্রপতির দপ্তর[১২]

উপদেষ্টাবৃন্দ- মোহাম্মদ উল্লাহ (এম এন এ), সৈয়দ আবদুস সুলতান (এম এন এ), কোরবান আলি (এম এন এ)

একান্ত সচিব- কাজী লুৎফুল হক

সহকারী সচিব- আজিজুর রহমান

প্রধান নিরাপত্তা অফিসার- সৈয়দ এম করিম

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর[১২]

এডিসি- মেজর নূরুল ইসলাম

একান্ত সচিব- ডাঃ ফারুক আজিজ

তথ্য অফিসার- আলী তারেক

মন্ত্রণালয়সমূহের বিবরণী

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী
চিফ অব স্টাফ কর্নেল এম এ রব
বিমান বাহিনী প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার
প্রধান সেনাপতির এডিসি লেঃ নূর
প্রতিরক্ষা সচিব আবদুস সামাদ
উপ সচিব

এস এ ইমাম

সহকারী সচিব
নূরুল ইসলাম চৌধুরী

এম এইচ সিদ্দিকী

কেবিনেট ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
প্রধান সচিব রুহুল কুদ্দুস
সংস্থাপন সচিব নূরুল কাদের খান
কেবিনেট সচিব এইচ টি ইমাম
উপ-সচিব
কামাল উদ্দিন আহম্মদ

তৌফিক এলাহী চৌধুরী

দীপক কুমার চৌধুরী

ওলিউল ইসলাম

সহকারী সচিব
বজলুর রহমান

নরেশ চন্দ্র রায়

মতিউর রহমান

এম এ আউয়াল

আবু তালেব

মোহাম্মদ হেদায়েত উল্ল্যা

কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী

শাহ মতিউর রহমান

পরিকল্পনা কমিশন[১২]
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
চেয়ারম্যান ডঃ মুজাফফর আহমদ চৌধুরী
সদস্য
স্বদেশ বসু

ডঃ মোশাররফ হোসেন

ডঃ আনিসুজ্জামান

ডঃ খান সরওয়ার মোর্শেদ

ডেপুটি চীফ
এ এ মাসুদ মিঞা

কে এস ডি সরমান

এ এস এম হোসেন

এম খালেকুজ্জামান

এ কে রায়

ডঃ ওয়াজিঊর রহমান

ডঃ এম নুরুল ইসলাম

রিসার্স অফিসার
ডি কে কলিন নো

তপন কুমার বোস

এম এ নওজেশ আলী

ডি কে নাথ

স্বরাষ্ট্র,ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়[১২]
সচিব এম এ খালেক
উপ-সচিব খসরুজ্জামান চৌধুরী
সহকারী সচিব
সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ

জ্ঞানরঞ্জন সাহা

গোলাম আকবর

স্টাফ অফিসার এম এ গাফফার
জেলা আনসার অফিসার
শরীফুল হক

রশীদ বখত মজুমদার

মহাকুমা আনসার অফিসার সৈয়দ হাবিবুল বারী
আনসার অফিসার
শামসুর রহমান

আকরাম হোসেন

তবিবুর রহমান

এ কে হুমায়ূন

কে জি কাদের

আবুল বাশার

আবদুল মান্নান

আলী আকবর

মোঃ জহির উদ্দিন

প্রেস,তথ্য,বেতার,ফিল্ম,আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন[১২]
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
এম এন এ ইনচার্জ জনাব আবদুল মান্নান (এম এন এ)
সচিব (প্রথম) আবদুস সামাদ ( ৩ সেপ্টে-১৩ অক্টো)
সচিব (দ্বিতীয়) আনোয়ারুল হক খান (১৪ অক্টো-১৬ ডিসে)
ডাইরেক্টর-আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন কামরুল হাসান
ডাইরেক্টর-ফিল্ম আব্দুল জব্বার খান
ডাইরেক্টর-প্রেস অ্যান্ড পাবলিসিটি এম আর আখতার মুকুল
অর্থ,শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
মন্ত্রীর একান্ত সচিব সাফাত হোসেন
সচিব (অর্থ) খোন্দকার আসাদুজ্জামান
সহকারী সচিব (অর্থ)
মাখন চন্দ্র মাঝি

শামসুদ্দিন হায়দার

ক্ষিতিশ চন্দ্র কুন্ডু

এ কে এম হেফারত উল্লাহ

আলি করি

সহকারী সচিব (শিল্প ও বাণিজ্য)
মোঃ ইদ্রিস আলি

জগন্নাথ দে

এ কে আনোয়ার হক

শিক্ষা মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
উপদেষ্টা কামরুজ্জামান (এম এন এ)
শিক্ষা অফিসার আহমেদ হোসেন
কৃষি মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
সচিব নূরউদ্দিন আহমদ
উপ-সচিব শহিদুল ইসলাম
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা
এন এম সরকার

মোজাম্মেল হোসেন

পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়[১২]
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
সচিব মাহবুবুল আলম চাষী
ওএসডি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ
মন্ত্রীর একান্ত সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিশনসমূহ[১২]

কলকাতা
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
বাংলাদেশ হাই কমিশনার, কলকাতা এম হোসেন আলি
প্রথম সচিব আর আই চৌধুরী
তৃতীয় সচিব
১। আনোয়ারুল চৌধুরী

২। কাজী নজরুল ইসলাম

সহকারী প্রেস এ্যাটাচী এম মোকছুদ আলী
অফিসার জায়েদুর রহমান
নয়াদিল্লী
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
কাউন্সিলর হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী
দ্বিতীয় সচিব কে এম শাহাবুদ্দিন
সহকারী প্রেস এ্যাটাচী আমজাদুল হক
হংকং
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
ট্রেড কমিশনার মহিউদ্দিন আহমদ
ফিলিপাইন
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
রাষ্ট্রদূত কে কে পন্নী
নিউইয়র্ক
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
উপ-কন্সাল এ এইচ মাহমুদ আলী
উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি, জাতিসংঘ এম এ করিম
ওয়াশিংটন
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
মিনিস্টার এনায়েত করিম
রাজনৈতিক কাউন্সিলার এ এম এম এস কিবরিয়া
অর্থনৈতিক কাউন্সিলার আবুল মাল আব্দুল মুহিত
শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক কাউন্সিলার এ আর মতিনউদ্দিন
তৃতীয় সচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি
একাউন্টস অফিসার এম আর চৌধুরী
সহকারী তথ্য অফিসার শেখ রুস্তম আলি
সহকারী প্রশাসনিক অফিসার এ এম এস আলম
যুক্তরাজ্য
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
দ্বিতীয় সচিব মহিউদ্দিন আহমদ
পরিচালক(অর্থ) এ লুৎফুল মতিন
কাউন্সিলার রেজাউল করিম
ডেপুটি ডাইরেক্টর আবদুর রঊফ
লেবার এ্যাটাচী ফজলুল হক চৌধুরী
সুইজারল্যান্ড
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
দ্বিতীয় সচিব ওয়ালিউর রহমান
ইরাক
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
রাষ্ট্রদূত এ এফ এম আবুল ফাতাহ
জাপান
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
তৃতীয় সচিব এ রহিম
প্রেস এ্যাটাচী এম মাসুদ
নেপাল
পদের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
তৃতীয় সচিব এম এ জায়গীরদার

আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ[১০]

বেসামরিক প্রশাসনকে অধিক গণতান্ত্রিক করার জন্য বাংলাদেশের আঞ্চলিক সুবিধা চিন্তা করে সমগ্র বাংলাদেশকে ১৯৭১ এর জুলাই মাসে ৯টি অঞ্চল এবং সেপ্টেম্বর মাসে চূড়ান্তভাবে ১১টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। সেপ্টেম্বর নাগাদ অঞ্চলগুলোর বিন্যাস হয়েছিল এভাবে-

এক নজরে আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ
নং জোন/অঞ্চল প্রধান অফিস এলাকা চেয়ারম্যান সচিব
দক্ষিণ পূর্ব জোন-১ সাবরুম চট্টগ্রাম,পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ফেনী মহাকুমা প্রফেসর নুরুল ইসলাম চৌধুরী এস এ সামাদ
দক্ষিণ পূর্ব জোন-২ আগরতলা ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী বাদে নোয়াখালী জহুর আহমদ চৌধুরী কে আর আহমদ
পূর্ব জোন ধর্মনগর হবিগঞ্জমৌলভিবাজার মহাকুমা কর্নেল এম এ রব কে এ হাসান
উত্তর পূর্ব জোন-১ ডাউকি সিলেট সদর,সুনামগঞ্জ দেওয়ান ফরিদ গাজী সি এস এইচ চৌধুরী
উত্তর পূর্ব জোন-২ তুরা ময়মনসিংহটাঙ্গাইল শামসুর রহমান খান লুৎফুর রহমান
উত্তর জোন কুচ বিহার রংপুর মতিউর রহমান ফয়েজউদ্দিন আহমদ
পশ্চিম জোন-১ বালুরঘাট দিনাজপুরবগুড়া আবদুর রহিম এ কাসেম খান
পশ্চিম জোন-২ মালদহ রাজশাহী আশরাফুল ইসলাম জেড আই ভূঁইয়া
দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১ কৃষ্ণনগর পাবনা,কুষ্টিয়া আবদুর রউফ চৌধুরী শামসুল হক
১০ দক্ষিণ পশ্চিম জোন-২ বনগাঁ ফরিদপুর,যশোর ফণিভূষণ মজুমদার বি বি বিশ্বাস
১১ দক্ষিণ জোন বারাসাত বরিশালপটুয়াখালীখুলনা নভেম্বর পর্যন্ত কেউ ছিলেন না এ মোমেন

প্রতিটি জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ গঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার জাতীয় ও প্রাদেশি পরিষদ সদস্যদের প্রশাসনিক পরিষদের সদস্য করে তাদের ভোটে নির্বাচিত একজন করে চেয়ারম্যানকে পরিষদের প্রধান করা হয়। সরকার হতে চেয়ারম্যানের অধীনে একজন করে সচিব নিযুক্ত করা হয়। একই সাথে প্রতিটি জোনে সরকার হতে ৭ জন করে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় তাদের বিভাগীয় কাজ সম্পাদন করতে।

কর্মকর্তাদের পদ মর্যাদা ছিলঃ-[] আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। [] শিক্ষা কর্মকর্তা। [] ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা। [] প্রকৌশল কর্মকর্তা। [] পুলিশ কর্মকর্তা। [] তথ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা। [] হিসাব বিভাগীয় কর্মকর্তা।

আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের নিয়ন্ত্রণে ছিল প্রধানত রিলিফ ক্যাম্প,যুব শিবির,সেনাবাহিনীকে সহযোগীতা সংক্রান্ত কাজ

প্রতিটি আঞ্চলিক জোনে ৫টি উপ-পরিষদ গঠিত হয়ঃ- ১ | অর্থ উপ-পরিষদ। ২ | ত্রাণ উপ-পরিষদ। ৩ |স্বাস্থ্য উপ-পরিষদ। ৪ | প্রচার উপ-পরিষদ। ৫ | শিক্ষা উপ-পরিষদ। প্রয়োজনে আরো উপ-পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়।

প্রতিটি উপ-পরিষদ গঠনের বিধান হয় আঞ্চলিক পরিষদ হতে নূন্যতম ৩ জন ও ঊর্ধ্বে ৭ জন সদস্য নিয়ে। সদস্যরা তাদের মাঝ হতে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। জোনাল অফিসার বা কর্মকর্তাদের সচিব করা হয়। প্রতিটি জোনে সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি আঞ্চলিক উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হত।

যুদ্ধকালীন সময়ে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও পরিকল্পনা

যুদ্ধকালীন সময়ে সরকারের বিভিন্নমুখী তৎপরতা যুদ্ধকে গতিময় রাখতে সহায়তা করে। এখানে সরকারের মন্ত্রণালয়সমূহের ভূমিকা ও কার্যবিবরনী সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

মুক্তিযুদ্ধকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান রূপে (commander-in-chief) এবং লে কর্নেল আবদুর রবকে চিফ অফ স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ রূপে নিযুক্ত করে সমগ্র বাংলাদেশ কে একাধিক (গঠনতান্ত্রিক ভাবে ১১টি) সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। ঐসব সেক্টর কে আবার সেক্টর কমান্ডাররা তাদের নিজ নিজ সুবিধা মত সাব সেক্টরে ভাগ করে নিয়েছিলেন। এছাড়াও কর্নেল ওসমানী তিনটি ব্রিগেড আকারের ফোর্স গঠন করেছিলেন যেগুলোর নামকরণ করা হয় তাদের অধিনায়কদের নামের অদ্যাংশ দিয়ে ( এস ফোর্স, কে ফোর্স, জেড ফোর্স )।

বিস্তারিতঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টরসমূহের তালিকা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধাtন কাজ ছিল বহির্বিশ্বে জনমত তৈরি করা।

অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যয়, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত সম্পদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্যের সুষ্ঠু ব্যবহার ইত্যাদি কাজ শৃঙ্খলার সাথে পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কাজ শুরু হবার পর কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে এবং এই ব্যবস্থা সরকারী চালিকা শক্তি হিসাবে পরিগণিত হয়। নিম্নলিখিত বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়ঃ

  1. বাজেট প্রণয়ন ও আয়-ব্যয়ের হিসাব;
  2. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত সম্পদের হিসাব প্রস্তুত;
  3. বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গকে অর্থ প্রদানের দায়িত্ব পালন ও বিধিমালা প্রণয়ন;
  4. আর্থিক শৃঙ্খলা প্রবর্তন;
  5. রাজস্ব ও শুল্ক আদায়;
  6. আর্থিক অনিয়ম তদন্তের জন্য কমিটি গঠন।[৮]

বাংলাদেশ সরকারের অর্থসংস্থানের জন্য বাংলাদেশ ফান্ড নামে একটি তহবিল খোলা হয়। এই ফান্ডে ভারত, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা হতো। সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের যে স্মারক ডাকটিকিট বের করেছিলেন তার বিক্রয়লব্ধ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারতে বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচের টিকেট থেকে প্রাপ্ত ৩লক্ষ টাকা সরকারি ট্রেজারিতে জমা করেন।[৮]

তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়

তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ও সাফল্য ছিল বহুমুখী।একদিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের অবিরাম উৎসাহ জোগানো,অন্যদিকে পত্র-পত্রিকা,ছোট ছোট পুস্তিকা,লিফলেট ইত্যাদি নিয়মিত প্রকাশের মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন খবরাখব্র পৌছানো এবং এসবের পরিকল্পনা করা এগুলোই ছিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যুদ্ধক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের অবিরাম উৎসাহ যোগাতে সহায়তা করে গেছে একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।

এছাড়া বিভিন্ন প্রকাশিত ছোট ছোট পত্র পত্রিকা দ্বারা রনাঙ্গনের যুদ্ধের বিবরণ,মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা,শরণার্থী শিবিরের অবস্থা ও মানুষদের মানবেতর জীবন-যাপন,বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য বিশ্ববাসীর কাছের আহবান,পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যার খবর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ন খবর প্রকাশ করা হত।

এসব কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের মনোবল ধরে রাখতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।[৮]

স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়

যুদ্ধকালীণ সময়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মত এই মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি এত ব্যাপক ছিল না। পাকিস্তান বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাটের কারণে সাধারণ মানুষেরা বাস্তুচ্যুত হয়ে পরে এবং সীমান্তের পাড়ে আশ্রয় নিতে থাকে। এ সময় ত্রাণ সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। সীমান্ত অঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে এবং দেশের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে পুলিশ প্রশাসন গঠন ও একে কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়[৮]

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের কাজকর্ম সম্পন্ন করা হত। একজন রিলিফ কমিশনারের অধীনে এই বিভাগ সংগঠিত ছিল। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কাজ করতেন। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ করা হত। আবেদনপত্র ছিল বিভিন্ন ধরনের। এসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হত। শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকদেরই ত্রাণ সুবিধা দেয়া হত[৮]

স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়

যুদ্ধকালীণ সময়ে এ বিভাগের প্রয়োজনীয়তা ও ভূমিকা দুইই ছিল অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকেই যুদ্ধের প্রয়োজনেই সীমান্তের কাছাকাছি অনেক জায়গায় সামরিক হাসপাতাল গড়ে উঠে। অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে, বিশেষ করে ত্রিপুরা-কুমিল্লা সীমান্ত বরাবর ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করেন স্বেচ্ছাসেবক ডাক্তার ও আওয়ামী লীগ কর্মীগণ। ২ মে তারিখে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডাঃ টি হোসেনকে স্বাস্থ্যসচিব হিসবে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে এই মন্ত্রণালয়ের কর্ম তৎপরতা শুরু হয়। শত্রুর আক্রমণে যারা আহত হতেন তাদের সেবা প্রদানই ছিল এ বিভাগের মুখ্য কাজ। এছাড়া বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের সকল শ্রেণির নাগরিকদের চিকিৎসা-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং তা বাস্তবায়ন করা হয়।

বিজয়কালীন ঘটনাক্রম

 
পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ক্রমশ শত্রু মুক্ত হতে থাকে। এর সাথে সাথে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে থাকে। তাই সরকার পরিস্থিতির উন্নতি সাধনের জন্য ১০ ডিসেম্বর একটি সিদ্ধান্ত নেন এবং তা বেতারে প্রচার করেন। ১৩ ডিসেম্বর হতে বেতারে পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য বার বার আহবান জানানো হতে থাকে। পাকিস্তানী বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর সকালে আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দেয়। ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটকে আত্মসমর্পণের সময় হিসাবে নির্ধারণ করা হয়। তখন সরকারের পক্ষ হতে দুটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমত,আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে থাকবেন প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানী (কিন্তু তিনি তখন প্রধান কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় এবং তার সাথে তাৎক্ষনিক যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় তার পরিবর্তে ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে বাংলাদেশের পক্ষ হতে প্রতিনিধি হিসাবে পাঠানো হয়)। দ্বিতীয়ত, আত্মসমর্পণের পর যত দ্রুত সম্ভব সরকারের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় স্থানান্তর করা। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তির পর সরকারি কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে দেশে ফিরতে থাকেন[৮]

 
মুজিবনগর সরকার
 
মুজিবনগর সরকার  মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল এ সরকার গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বৈদ্যনাথতলা গ্রামের নামকরণ হয় মুজিবনগর। মুজিবনগর সরকারের কর্মকান্ড বাংলাদেশ ভূখন্ডের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়েছিল বলে এ সরকার প্রবাসী মুজিবনগর সরকার হিসেবেও খ্যাত।
 
সরকার গঠন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তথা প্রধান নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুক্তাঞ্চল বৈদ্যনাথতলায় সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এম.এন.এ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম.এন.এ। নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
 
মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন  ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সরকার গঠন এবং ১৭ এপ্রিল সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন হয় ১৮ এপ্রিল। এদিন সরকারের কাঠামো ছিল নিম্নরূপ:
 
মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে থাকে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম নিম্নরূপ:
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি (রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানে অন্তরীণ থাকার কারণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের দায়িত্বপ্রাপ্ত)
তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রীএবং প্রতিরক্ষা, তথ্য, সম্প্রচার ও যোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়াবলি, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ, সংস্থাপন এবং অন্যান্য যেসব বিষয় কারও ওপর ন্যস্ত হয়নি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী
খন্দকার মোশতাক আহমদ মন্ত্রী, পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
এম মনসুর আলী মন্ত্রী, অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
এ এইচ এম কামরুজ্জামান মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়



মুজিবনগর সরকারের উপরাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ এবং প্রধান সেনাপতি
 
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এস.এ সামাদ প্রতিরক্ষা সচিব। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম.এ.জি ওসমানী, চীফ অব স্টাফ কর্নেল আবদুর রব, উপ-সেনাপতি এ.কে খন্দকার, এবং ডি.জি মেডিকেল সার্ভিস ও বিভিন্ন পদবীর স্টাফ অফিসার এ দপ্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধরত অঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে প্রতিটিতে একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। তবে ১০নং বা নৌ সেক্টরে কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না, কমান্ডোরা যখন যে এলাকায় অভিযান করত সে সেক্টরের কমান্ডারের অধীনে থাকত। এ ছাড়াও জেড ফোর্স, কে ফোর্স ও এস ফোর্স নামে তিনটি ব্রিগেড গঠন করা হয়। ব্রিগেডগুলির কমান্ডার হলেন যথাক্রমে মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ এবং মেজর কে.এম সফিউল্লাহ।
 
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়  যুদ্ধের সময় বিদেশে বাংলাদেশ মিশন স্থাপন করে এবং বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল প্রেরণ করে বহির্বিশ্বের সরকার ও জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে এ মন্ত্রণালয়। এ লক্ষে কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, স্টকহোম প্রভৃতি স্থানে কূটনৈতিক মিশন স্থাপন করা হয় এবং জাতিসংঘ, আফগানিস্তান, সিরিয়া-লেবানন, নেপাল, শ্রীলংকা, বার্মা, থাইল্যান্ড, জাপান প্রভৃতি দেশের সমর্থন আদায়ের জন্য কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল প্রেরণ করে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে এ মন্ত্রণালয় থেকে পত্র প্রেরিত হয়। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর প্রধান ছিলেন কলকাতায় হোসেন আলী, দিল্লিতে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, ইউরোপে বিশেষ প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, ওয়াশিংটনে এম আর সিদ্দিকী। স্টকহোমে আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধিত্ব করেন।
 
বাংলাদেশ সরকার প্রেরিত কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সিরিয়া-লেবাননে মোল্লা জালাল উদ্দীন এমএনএ ও ড. মাহমুদ শাহ কোরেশী, আফগানিস্তানে আবদুস সামাদ আজাদ, আশরাফ আলী চৌধুরী এমএনএ, মওলানা খায়রুল ইসলাম যশোরী ও এডভোকেট নূরুল কাদের। নেপালে প্রেরিত হন আবদুল মালেক উকিল, সুবোধচন্দ্র মিত্র ও আবদুল মোমিন তালুকদার। এডভোকেট ফকির শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে শামসুল হক ও জ্যোতিপাল মহাথেরো শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও জাপান গমন করেন। মাহবুব আলম চাষী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পররাষ্ট্র দপ্তর অবস্থিত ছিল কলকাতার ৯ সার্কাস এভিনিউতে।
 
অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় 
এম মনসুর আলী এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন সচিব। যুদ্ধের সময় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য কোন কাজ ছিল না। তবে অর্থ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করে: সরকারের আয়-ব্যয়ের বাজেট প্রণয়ন; বাংলাদেশের অভ্যন্তর ও অন্যান্য উৎস হতে প্রাপ্ত সম্পদের হিসাব তৈরি; বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গকে অর্থ প্রদানের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন; আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা; রাজস্ব ও শুল্ক আদায়; এবং যেকোন আর্থিক অনিয়ম রোধের জন্য কমিটি গঠন।
 
বাংলাদেশ সরকার তার আয়ের উৎস ও ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করে প্রথমে ছয় মাসের জন্য একটি বাজেট তৈরি করে। বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সংরক্ষণের জন্য ট্রেজারি স্থাপন করে এবং প্রবাসী বাঙালি ও বিভিন্ন বিদেশী নাগরিক ও সংস্থার তরফ থেকে প্রাপ্ত অর্থ বাংলাদেশ ফান্ড নামের একটি তহবিলে জমা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের প্রস্তাব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত হত এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সে অর্থ পৌঁছাত। সরকারি ব্যয়ের স্বচ্ছতার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।
 
মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয় 
মন্ত্রিপরিষদের সভায় বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন, সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ এবং এসব বিষয়াদি লিপিবদ্ধকরণ মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের আওতাভুক্ত ছিল। মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হবার পর পরিষদের প্রথম দুই মাসের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকাংশই তাজউদ্দীন আহমদ নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেন। এরপর এইচ টি ইমাম সচিব হিসেবে যোগ দেবার পর অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমনতয়ে সচিবালয় গড়ে ওঠে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় সাধনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 
সাধারণ প্রশাসন বিভাগ 
নিয়োগ, বদলী, পদোন্নতি ও চাকরির বিধি প্রণয়নের নিমিত্তে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের আওতায় সাধারণ প্রশাসন বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রধানত দ্বিতীয় শ্রেণীর বিভিন্ন নিয়োগ এ বিভাগের আওতাধীন ছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তালিকা বহির্ভূত ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিতকরণ এবং বিভিন্ন নিয়োগের জন্য প্যানেল তৈরি করাও ছিল এ বিভাগের দায়িত্ব। নুরুল কাদের সংস্থাপন সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
 
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল 
সাধারণ প্রশাসন বিভাগের আওতায় এ কাউন্সিল গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনের পক্ষে দেশের অভ্যন্তরে প্রতিটি জেলায় সরাসরি কাজ করা অসম্ভব বিধায় কয়েকটি জেলার সমন্বয়ে একটি করে প্রশাসনিক জোন গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৯টি জোন এবং পরবর্তী সময়ে আরও দু’টি জোন প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিটি জোনের একটি হেডকোয়ার্টার ছিল এবং একজন চেয়ারম্যান (এমএনএ বা এমপিএ) ও একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জোনের দায়িত্ব পালন করেন। সংশ্লিষ্ট জোনের চেয়ারম্যান, সদস্য, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারীদের সমন্বয়ে প্রশাসনিক কাউন্সিল গঠিত হয়।
 
দায়িত্ব ও কর্তব্য মন্ত্রিসভা কর্তৃক জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের জন্য গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, জোনের ওপর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব তথা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, উদ্বাস্ত্তদের ত্রাণ সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ত্রাণ প্রদানের বিষয়টির সমন্বয় সাধন, যুবক্যাম্পগুলোকে সাধ্যমত সহায়তা প্রদান এবং সেক্টর কমান্ডকে সহায়তা করা জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের প্রধান কাজ ছিল। মুক্তাঞ্চলে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন যে কার্যকর রয়েছে তা জনগণকে বোঝানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করাও জোনাল প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল। সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে ৫ দিনের নোটিশে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা সচিবকে মাসে কমপক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হত।
 
স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয় 
এ মন্ত্রণালয় একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে প্রথম কাজ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে মহাপরিচালককে সচিবের মর্যাদা দেয়া হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ দুভাগে বিভক্ত ছিল: (ক) সেনাবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা ও (খ) বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ বা সরাসরি অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করে নি এমন জনগণকে চিকিৎসা প্রদান। এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল, চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ, ঔষধ-পথ্য সংগ্রহ, মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসক দল প্রেরণ, শল্য চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, এবং আহত ও নিহতদের জন্য পরিবহণের ব্যবস্থা করা। ডা. টি হোসেন প্রথমে স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক এবং পরে স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব নিযুক্ত হন।
 
তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়   
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে বসবাসরত বাঙালিদের মনোবল উজ্জীবিত রাখার প্রয়োজনে এ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ছিল অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ মন্ত্রণালয় প্রধানত চারটি মাধ্যমে এর কর্মকান্ড পরিচালনা করত: (ক) বেতার (স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র), (খ) চলচ্চিত্র, (গ) প্রকাশনা, (ঘ) চারুকলা ও ডিজাইন।
 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 
মুক্তাঞ্চল, শরণার্থী ক্যাম্প ও ট্রেনিং ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এ মন্ত্রণালয়ের প্রধান দায়িত্ব ছিল। মুক্তাঞ্চলে প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির ব্যাপারে সরকারকে সহায়তা এবং যুদ্ধ এলাকা ও মুক্তাঞ্চলে গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনার জন্য গোয়েন্দা বিভাগ গঠন করা হয়। এ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ পুলিশের পোশাক, ব্যাজ ও মনোগ্রাম নির্ধারণ করে। আবদুল খালেককে প্রথমে পুলিশের আই.জি ও পরে স্বরাষ্ট্র সচিব নিয়োগ দেয়া হয়। যুদ্ধের শেষদিকে বাংলাদেশকে ৪টি রেঞ্জে ভাগ করে চারজন ডিআইজি ও প্রত্যেক জেলায় এসপি নিয়োগ করা হয়। ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশী জনগণের ভ্রমণ ডকুমেন্ট ইস্যু করাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল।
 
ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ
ভারতে আশ্রয়প্রাপ্ত শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। শরণার্থীদের আবেদন বিবেচনা করে তাদের সাধ্যমত সহায়তা প্রদান করা হত। ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়: (ক) ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি এবং (খ) উদ্বাস্ত্ত কল্যাণ বোর্ড।
 
সংসদ বিষয়ক বিভাগ 
পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ বিভাগ কাজ করে। প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদ সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং তাদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করা এ বিভাগের প্রধান দায়িত্ব ছিল। মুক্তিযোদ্ধা বাছাই, শরণার্থীদের আবাসন ও যুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে পরিষদ সদস্যগণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এসব কর্মকান্ডের জন্য তাদের ভাতা প্রদান করা হত।
 
কৃষি বিভাগ 
যুদ্ধপরবর্তী সময়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ এবং যুদ্ধকালীন ক্ষতির বিবেচনায় কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে কিভাবে খাদ্য সংকট কাটিয়ে উঠা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেবার জন্য এ বিভাগ কাজ করে। নুরুদ্দিন আহমদ কৃষি সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
 
প্রকৌশল বিভাগ 
যুদ্ধে সেক্টরগুলোতে প্রকৌশল বিষয়ক সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষ করে দ্রুত রাস্তা নির্মাণ ও মেরামত এবং সেতু মেরামতের জন্য কিছুসংখ্যক প্রকৌশলীকে এ বিভাগের অধীনে নিয়োগ করা হয়। এমদাদ আলী প্রধান প্রকৌশলী নিযুক্ত হন।
 
পরিকল্পনা সেল 
আওয়ামী লীগের ছয়দফা এবং ১৯৭০-এর নির্বাচনে এ দলের ইশতেহারের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে দেশকে গড়ে তোলার জন্য, বিশেষ করে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কিভাবে দ্রুত কাটিয়ে উঠা যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সরকার এ সেল গঠন করে। পাকিস্তান শাসনামলে উন্নয়নবঞ্চিত এলাকা চিহ্নিতকরণ ও প্রশাসনিক পুনর্গঠন বিষয়ে পরামর্শ দেয়াও এর কাজ ছিল। প্রাথমিকভাবে বাস্ত্তহারাদের পুনর্বাসন, খাদ্য সরবরাহ, স্বাস্থ্য, পানি-বিদ্যুৎ ও বন্ধ শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়ে এ সেল সরকারকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দান করে। এ সেলই পরবর্তী সময়ে পরিকল্পনা কমিশনে রূপান্তরিত হয়। ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী চেয়ারম্যন এবং ড. খান সারোয়ার মুর্শেদ, ড. মোশাররফ হোসেন, ড. এস.আর বোস ও  ড. আনিসুজ্জামান পরিকল্পনা সেলের সদস্য ছিলেন।
 
যুব ও অভ্যর্থনা শিবির নিয়ন্ত্রণ বোর্ড 
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে আগ্রহী যুবকদের প্রথমে অভ্যর্থনা ক্যাম্পে এবং পরে সেখান থেকে যুবক্যাম্পে ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হত। জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলগুলোর আওতায় উভয় ক্যাম্প পরিচালিত হত। এ বোর্ডের চেয়ারম্যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাহায্যে কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে মোট ১০৬টি যুব ক্যাম্প ও ১১২টি অভ্যর্থনা ক্যাম্প ছিল। বোর্ডের প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারের বাজেটেই উভয় ক্যাম্প পরিচালিত হয়। অধ্যাপক ইউসুফ আলী যুব ও অভ্যর্থনা শিবির নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া প্রতিটি ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন একজন করে এমএনএ বা এমপিএ।  [মোহাম্মদ ফায়েকউজ্জামান ]
 
গ্রন্থপঞ্জি হাসান হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র, ঢাকা, ১৯৮২; এইচ.টি ইমাম, বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১, ২০০৪; নূরুল কাদের, একাত্তর আমার, ১৯৯৯; শামসুল হুদা চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর, ১৯৮৫; বি বি বিশ্বাস, একাত্তরে মুজিবনগর, ২০০০; মোহাম্মদ ফায়েকউজ্জামান, মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ঢাকা, ২০০৮।
 

মুজিবনগর সরকার: ১৯৭১ সালে যেভাবে শপথ নিয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা

  • সম্মাননা নিচ্ছেন মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম
ছবির ক্যাপশান,

সম্মাননা নিচ্ছেন মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম

১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ - মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় এক আমবাগানে শপথ নেয় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার।

শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জেলে। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন মেহেরপুরে তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে।

সেখানে তিনি বলেন, ''সমবেত সাংবাদিক বন্ধুগণ এবং উপস্থিত জনসাধারণ, আপনাদের সামনে আমার মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রীকে আপনাদের সামনে সর্বপ্রথমে উপস্থিত করছি। জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ।''

এ সময় সবাই হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ ছাড়াও তিনি মন্ত্রী হিসাবে অনুষ্ঠানে হাজির করেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে।

সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীর নাম ঘোষণা করা হয়।

এই মুজিবনগর সরকারের অধীনেই পরিচালিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।

বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:

শপথ গ্রহণের পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার দেয়ার হচ্ছে
ছবির ক্যাপশান,

শপথ গ্রহণের পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার দেয়ার হচ্ছে

মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা - যা পরে মুজিবনগর নামে পরিচিতি পায় - সেখানে অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল, তা আয়োজনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন সেসময় মেহেরপুরের সাবডিভিশনাল অফিসার তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

মি. চৌধুরী বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন ওই অনুষ্ঠান আয়োজনের নানা খুঁটিনাটি কথা।

''আমি এবং আমার বন্ধু মাহবুব, আমাদের সহযোগিতায় তাজউদ্দীন সাহেব এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামকে আমরা সীমান্ত পার করে ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম,'' বিবিসিকে জানাচ্ছিলেন তিনি।

''সেই সুবাদে তাজউদ্দীন সাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয় এবং পরের দিকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। আমরা টেলিফোনে কলকাতার সঙ্গে মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গার সংযোগ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলাম।''

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ''এরই ধারাবাহিকতায় যখন সরকার গঠন করার প্রয়োজন দেখা দিল, তখন আমাকে বলা হলো যে অতিসত্বর সরকার গঠন করা হবে, তোমাদের দিক থেকে একটা প্রস্তুতি নাও। ধারণা দেয়া হলো যে ওই এলাকাটায় এটি গঠিত হতে পারে।''

''কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে তখন আমরা পিছু হটতে শুরু করেছি। পাকিস্তান আর্মি যশোর থেকে আক্রমণ শুরু করেছে, চুয়াডাঙ্গায় বম্বিং শুরু করেছে। আর্টিলারির সহায়তায় তারা বেশ অগ্রসর হচ্ছে। টেকনিক্যাল রিট্রিট বলতে যেটা বোঝায়, আমরা সেটা এর মধ্যেই শুরু করে দিয়েছি।''

''এসব ঘটনার মধ্যেই আমাদের মাঝে মাঝে বলা হচ্ছে যে, তোমরা তৈরি থেকো, সরকার গঠন হতে পারে। এরকম সময়ে ১৫ই এপ্রিলের দিকে আমরা যখন মেহেরপুরে চলে এসেছি, তখন আমাকে খবর দেয়া হলো যে একটা জায়গা তোমরা বাছাই করো,'' স্মৃতিচারণ করছিলেন মি. চৌধুরী।

মুজিবনগর সরকার: বাম থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এইচএম কামরুজ্জামান, জেনারেল এমএজি ওসমানী
ছবির ক্যাপশান,

মুজিবনগর সরকার: বাম থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এইচএম কামরুজ্জামান, জেনারেল এমএজি ওসমানী

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর কাছে প্রশ্ন ছিলো যে বৈদনাথতলার ওই স্থানটিকে বাছাই করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো আমলে নেয়া হয়েছিল?

জবাবে তিনি বলেন, এমন একটি জায়গা বাছাই করতে বলা হয়েছিলো যেখানে ভারত থেকে সহজেই ঢোকা যায়, যে এলাকা শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে - বিশেষ করে আকাশ থেকে এবং বাংলাদেশের দিক বিবেচনা করলে একটু যেন দুর্গম হয়।

''লেফটেন্যান্ট কর্নেল চক্রবর্তী নামে বিএসএফের একজন কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৈদ্যনাথতলার আমবাগানটি বাছাই করা হলো। সেখানে আমবাগান থাকায় আকাশ থেকে সহজে দেখা যায় না। মেহেরপুর থেকে ১০/১২ কিলোমিটার দূরত্বে হলেও রাস্তাঘাট নষ্ট থাকায় সহজে যাওয়া যায় না। আবার ভারত থেকে সহজেই সেখানে প্রবেশ করা যায়।''

তিনি বলেন, পুরো বিষয়টির আয়োজন করা হয়েছিল খুবই গোপনে।

''কী হবে সেটা কাউকে বলিনি। তখন আমাদের সীমান্ত এলাকায় রেগুলার ইপিআর নিয়ে গিয়েছিলাম, সেই সঙ্গে আনসারের একটি ছোট কন্টিনজেন্ট রেখেছিলাম - সীমান্তের প্রতীকী নিরাপত্তার জন্য।''

মি. চৌধুরী বলেন, ''তাদের কাছে গিয়ে আমরা বললাম যে, ভারতের দিক থেকে কয়েকজন লোক আসতে পারে। এখানে একটা জায়গায় অনুষ্ঠান হতে পারে, তোমরা তাদের সাথে যোগাযোগ রেখো এবং যা বলে করো। পরে খবর পাঠানো হলো যে ১৭ই এপ্রিল তোমরা প্রস্তুত থেকো।''

ওই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে পিছু হটে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার কৃষ্ণনগরে পৌঁছেন মাগুরার তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক ওয়ালিউল ইসলাম এবং পাবনার প্রশাসক নুরুল কাদের।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের খবর তাদের কাছেও পৌঁছেছিল, বলছেন ওয়ালিউল ইসলাম।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন,''তখন মেজর ওসমান চুয়াডাঙ্গা থেকে তার হেডকোয়ার্টার মেহেরপুরে নিয়ে গেছেন। চুয়াডাঙ্গায় কিছু বোমাবর্ষণ হওয়ায় তারা জায়গা বদল করেছেন। ওখানে দুই দিন থাকার পরে আমরা যখন ভারতে প্রবেশ করি, তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে।''

''সেখান থেকে আমরা কৃষ্ণনগরে গেলাম - এটা ১৬ তারিখের কথা। নুরুল কাদের আমাকে বললেন, তুমি কাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চলে এসো, কিছু কাজ আছে।''

''আমি সাড়ে ৮টা-পৌনে ৯টার দিকে গেলে তিনি বললেন, নদীয়ার ডিএম (ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট) খুঁজছে, তুমি একটু কথা বলো। আমি ফোন করলে তিনি বললেন, দেখুন আমাদের কাছে খবর আছে, আমাদের কাছাকাছি বাংলাদেশের ভেতরে আপনাদের সরকার শপথ নেবে। তো, আপনারা যারা এখানে আছেন, তাদের পাঠিয়ে দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ পেয়েছি,'' বলছেন মি. ইসলাম।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে সকালে।

মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান
ছবির ক্যাপশান,

মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জানান, স্থান নির্বাচনের পর তাদের অনুষ্ঠান আয়োজনের যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হলো।

''সেখানে আমরা ছোট একটা মঞ্চের মতো ব্যবস্থা করলাম। কাছাকাছি ভবেরপাড়ার একটি মিশনারি হাসপাতাল থেকে কিছু চেয়ার টেবিল ধার করে নিয়ে আসলাম। ভারতীয় আর্মির কিছু লোককে যেতে দেয়া হলো, যাতে কোন বিমান হামলা হলে সেটাকে দমন করা যায়।''

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ''আমাদের লোকজনকে নিয়েও একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলো, যাতে শত্রু আক্রমণ করলে প্রতিরোধ করে সবাই নিরাপদে চলে যেতে পারেন।ওই সময় যুদ্ধের পরিস্থিতিতে গ্রামেগঞ্জে খুবই সীমিতভাবে আয়োজন করতে হয়েছিল।''

সকাল ৯টার সময় থেকে অনুষ্ঠানস্থলে আমন্ত্রিত অতিথিদের আসা শুরু হয়।

কৃষ্ণনগর থেকে সেখানে গিয়ে ওয়ালিউল ইসলাম দেখতে পান, বৈদ্যনাথতলায় একটি মঞ্চ বানানো হয়েছে। মঞ্চে সাতটি বা আটটি চেয়ার ছিল, যার একটি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য খালি ছিল।

সেখানে 'ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স' পাঠ করলেন গণপরিষদের স্পিকার ইউসুফ আলী। তিনিই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।

''এরপর আমরা ভেবেছিলাম ইপিআরের লোকজনকে দিয়ে একটা গার্ড অব অনার দেয়া হবে। কিন্তু মেজর ওসমানসহ ইপিআরের লোকজন তখনো সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। তখন আমি বিকল্প সমাধান খুঁজতে বাধ্য হলাম,'' বলছিলেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

''সেখানে আনসারের যে লোকজন ছিল, তাদের একত্রিত করে আমার বন্ধু মাহবুব - যে ঝিনাইদহের এসডিও ছিল। যেহেতু তার গার্ড অব অনার দেয়ার প্রশিক্ষণ রয়েছে, তখন তাদের নিয়ে একটি রিহার্সাল দেয়া হলো। এরপরে তারাই গার্ড অব অনার দিলেন।''

তখন সেখানে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদেরও পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং উপস্থিত অভ্যাগতদের সঙ্গে।

ওয়ালিউল ইসলাম বলছেন, ''গার্ড অব অনারের পর তৌফিক এসে বললো, 'আপনারা যারা মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরকে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই'। তখন আমরা সাত অথবা আটজন দাঁড়ালাম। বাকিরা সবাই সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট বা ক্যাপ্টেন পদের কর্মকর্তা ছিলেন। কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো যে আমি একজন প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধা।''

অনুষ্ঠানটি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জানাচ্ছেন যে গোটা সময়টা জুড়ে তার মধ্যে একটা উদ্বেগ কাজ করছিল।

''সব সময়ে একটা ভয় ছিল কোন কারণে যদি পাকিস্তান আর্মি আক্রমণ করে বসে! তবে একটা আশার কথা ছিল যে, ওখানে আসতে হলে ভারতের আকাশসীমা হয়ে আসতে হয় - না হলে বিমান ঘুরতে পারে না। তাই একটা চেষ্টা ছিল যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু শেষ করে চলে যাওয়া। অনুষ্ঠানটি দীর্ঘায়িত করার কোন পরিকল্পনা ছিল না।''

আমবাগানের ঘন পাতার আচ্ছাদনে আড়াল করা ওই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নবগঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ তার ভাষণে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ''আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই জন্যে যে, তারা আমাদের আমন্ত্রণে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি দেখে যাওয়ার জন্য বহু কষ্ট করে, বহু দূর দূরান্ত থেকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন।''

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, সেদিন অনুষ্ঠানে অন্ততপক্ষে একশো' সাংবাদিক উপস্থিত হয়েছিলেন, আর তাদের মধ্যে ছিলেন অনেক বিদেশী সাংবাদিক।

ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, ১০ই এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে সার্বভৌম বাংলাদেশের যে সরকার গঠন করা হয়েছিল, ১৭ই এপ্রিল সেই সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার লড়াই একটা অঙ্গীকার পেয়েছিল।

''আমি সেখানে একটা জিনিস বুঝতে পারছিলাম, এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, পাকিস্তানিরা কখনোই এখানে জয়লাভ করতে পারবে না। সরকার গঠন হওয়ায় আমি এটাকে একটা পজিটিভ দিক হিসাবে দেখেছি যে এর ফলে আমরা আনুষ্ঠানিকতা পেলাম, একদিন স্বাধীন আমরা হবোই,'' বলছিলেন ওয়ালিউল ইসলাম।

সেদিন ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলো মেহেরপুরের একটি অখ্যাত আমবাগান।

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ''ওই আমবাগানটা খুব ঘন আমবাগান। অনেক পুরনো আমগাছ - গাছে গাছ লেগে ছাতার মতো হয়ে থাকে। দিনের আলো ঝিলমিল করছিল, আনন্দঘন উৎসবের মতো লাগছিল। মনে হচ্ছিল প্রকৃতিও যেন এটাকে সমর্থন দিচ্ছে, আর রূপকথার মতো অনুষ্ঠানটা শেষ হলো।''

''অজপাড়াগায়ের একটি পল্লী - যে আমবাগানে কখনো কিছু হতো না - সেখানে একটা দেশের সরকারের প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। আমারা সবাই যখন চলে গেলাম, তখন যেন রূপকথার রাজকন্যাকে সোনার কাঠি দিয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হলো।''


অপারেশন জ্যাকপট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
 
 
অপারেশন জ্যাকপট
মূল যুদ্ধ: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
Bansec71.PNG
অপারেশন জ্যাকপটের আংশিক নকশা। সঠিক তথ্যের অভাবে কিছু স্থান আনুমানিকভাবে চিহ্নিত।
তারিখ ১৫ আগস্ট ১৯৭১
অবস্থান
১। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর

২। মংলা সমুদ্রবন্দর ৩। চাঁদপুর নদীবন্দর

৪নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর
ফলাফল • মুক্তিবাহিনীর জন্য প্রশিক্ষন এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহ
• পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর শক্তিমত্তার প্রদর্শন
• পাকিস্তানি নৌবাহিনীকে দূর্বল করা
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
বাংলাদেশ
বিবাদমান পক্ষ
 বাংলাদেশ  পাকিস্তান
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী

মুক্তি বাহিনী :[১]
বাংলাদেশ কর্নেল এম এ জি ওসমানী

বাংলাদেশ মেজর রফিকুল ইসলাম (সেক্টর-১)
বাংলাদেশ লে. ক. খালেদ মোশাররফ (সেক্টর-২)
বাংলাদেশ লে. ক. কে এম শফিউল্লাহ (সেক্টর-৩)
বাংলাদেশ কর্নেল সি. আর. দত্ত (সেক্টর-৪)
বাংলাদেশ লে. ক. মীর শওকত আলী (সেক্টর-৫)
বাংলাদেশ উইং কমান্ডার এম কে বাশার (সেক্টর-৬)
বাংলাদেশ লে. ক. কিউ এন জামান (সেক্টর-৭)
বাংলাদেশ মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (সেক্টর-৮)
বাংলাদেশ মেজর মোঃ জলিল (সেক্টর-৯)
বাংলাদেশ নৌ কমান্ডো (সেক্টর-১০)
বাংলাদেশ লে. ক. আবু তাহের (সেক্টর-১১)

ভারতীয় সেনাবাহিনী:[২]
ভারতলে. জে. বি. এন. "জিমি" সরকার[৩]
ভারতলে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা
ভারতব্রিগেডিয়ার বি. সি. জোশী - আলফা সেক্টর
ভারতব্রিগেডিয়ার প্রেম সিং – ব্র্যাভো সেক্টর
ভারত ব্রিগেডিয়ার এন. এ. সালিক – চার্লি সেক্টর
ভারত ব্রিগেডিয়ার সহদেব সিং – ডেল্টা সেক্টর
ভারতব্রিগেডিয়ার এম. বি. ওয়াধ – একহো সেক্টর
ভারত ব্রিগেডিয়ার সন্ত সিং – ফক্সট্রট সেক্টর
পাকিস্তান সেনাবাহিনী:
Flag of the Pakistani Army.svg লে. জে. আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী
Naval Jack of Pakistan.svg রিয়ার এডমিরাল মোঃ শরিফ
Flag of the Pakistani Army.svg ব্রি. জে. উইলিয়াম হ্যারিসন
Naval Jack of Pakistan.svg কমোডর ডেভিড আর. ফেলিক্স
শক্তি
মুক্তি বাহিনী :[১]
সেক্টর ১০ এর অধীনে ১৪৮ জন নৌ কমান্ডো।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী:
১৪ পদাতিক
৯ পদাতিক
১৬ পদাতিক
৩৯ (এড-হক) পদাতিক
৩৬ (এড-হক) পদাতিক
৯৭ স্বতন্ত্র পদাতিক
৪০ সেনা লজিস্টিক ব্রিগ্রেড
৮ সেনা এভিয়েশন স্কোয়াড্রন
পাকিস্তান নৌবাহিনী:
পাকিস্তান নৌ সীল
পাকিস্তান মেরিন কর্পস
১৭ নৌ (সার্চ এন্ড ডেস্ট্রয়) স্কোয়াড্রন
পাকিস্তান বিমান বাহিনী:
১৪ নং স্কোয়াড্রন

আধাসামরিক বাহিনী:
পূর্ব পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স: ৬ সেক্টর হেড-কোয়ার্টারস উইংস , ১৭ অপারেশনাল উইংস [৪]
রাজাকার

অপারেশন জ্যাকপট বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৌ-সেক্টর পরিচালিত সফলতম গেরিলা অপারেশন। এটি ছিল একটি আত্মঘাতী অপারেশন। এ অপারেশন ১৯৭১-এর ১৫ আগস্ট রাত ১২টার পর অর্থাৎ ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর এবং দেশের অভ্যন্তরে চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরে একই সময়ে পরিচালিত হয়।[৫] ১০নং সেক্টরের অধীনে ট্রেনিং প্রাপ্ত নৌ কমান্ডো যোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতার নিদর্শন এই অপারেশন জ্যাকপট। এই গেরিলা অপারেশনে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেকগুলো অস্ত্র ও রসদবাহী জাহাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও বড় রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্যকারী অনেকগুলো বিদেশি জাহাজও থাকায় এই অপারেশন বাংলাদেশের যুদ্ধ এবং যোদ্ধাদেরকে সারা বিশ্বে পরিচিতি পাইয়ে দেয়।সারা বিশ্ব বুঝতে পারে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই লড়ছে।এটি বাংলাদেশের ইতিহাস এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ মিশন।

নৌ-কমান্ডো সেক্টর[সম্পাদনা]

বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল তার মধ্য দেশের অভ্যন্তরীন সকল নৌ চলাচল, বন্দর এবং উপকূলীয় এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছিল ১০নং সেক্টর বা নৌ সেক্টর। এ সেক্টরের কোন নির্দিষ্ট সেক্টর কমান্ডার ছিল না। যখন যে সেক্টরে অপারেশন চলত তখন সেই সেক্টরের কমান্ডারদের সহযোগীতায় নৌ-গেরিলাদের কাজ করতে হত। তারা সরাসরি মুজিবনগর হেডকোয়ার্টারের অধীনে কাজ করতেন।

পেছনের কথা[সম্পাদনা]

মার্চের শুরুর দিকে পাকিস্তানি সাবমেরিন পি এন এস ম্যাংরো ফ্রান্সের তুলন সাবমেরিন ডকইয়ার্ডে যায় পাকিস্তানি সাবমেরিনারদের প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য। সেই ৪১ জন সাবমেরিনারদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন বাঙালি অফিসার। তারা আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে ২৫ মার্চের গণহত্যার কথা শুনে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে ৮ জন ৩০ মার্চ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ৯ এপ্রিল ১৯৭১ তারা দিল্লিতে এসে পৌছান।[৬] এখানে তাদের নাম উল্লেখ করা হলোঃ-[৭]

  1. মোঃ রহমতউল্লাহ।
  2. সৈয়দ মোশাররফ হোসেন।
  3. শেখ আমানউল্লাহ।
  4. মোঃ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী।
  5. মোঃ আহসানউল্লাহ।
  6. মোঃ আবদুর রকিব মিয়া।
  7. মো আবদুর রহমান আবেদ।
  8. মোঃ বদিউল আলম।

তারপর উক্ত ৮জনের সাথে আরো কয়েকজনকে একত্র করে ২০ জনের একটি গেরিলা দল গঠন করে তাদের ভারতে বিশেষ ট্রেনিং দেয়া হয়। তারপর তারা দেশে আসলে তাদের সাথে কর্নেল ওসমানীর দেখা করানো হয়। তখন ওসমানী নৌ-কমান্ডো বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

গেরিলা ট্রেনিং পর্ব[সম্পাদনা]

ওসমানীর সিদ্ধান্তে নৌ-কমান্ডো সেক্টর খোলার পর বাছাইকৃত গেরিলাদের ট্রেনিং দেয়ার উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক পলাশীর স্মৃতিসৌধের পাশে ভাগীরথী নদীর তীরে ২৩ মে ১৯৭১ তারিখে একটি গোপন ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয়। এই ট্রেনিং ক্যাম্পের সাংকেতিক নাম দেয়া হয় সি-২ পি (C-2 P)। এখানে ট্রেনিং দেয়ার উদ্দেশ্যে অন্যান্য সেক্টরসমূহের বিভিন্ন শিবির থেকে মে মাসের শুরুর দিকে প্রায় ৩০০ জন বাছাইকৃত যোদ্ধা সংগ্রহ করা হয়।[৮] ট্রেনিং ক্যাম্পে এদের কি ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে সে বিষয়টি এতই গোপনীয় ছিল যে, সেক্টর কমান্ডারদের মধ্যেও শুধুমাত্র যার এলাকায় অপারেশন চালানো হবে তিনি ব্যতীত আর কেউ এই সম্পর্কে জানতেন না।[৯]

ট্রেনিং শুরু হবার আগেই বাছাইকৃত যোদ্ধাদের বলে দেয়া হয় যে এটি একটি সুইসাইডাল অপারেশন বা আত্মঘাতী যুদ্ধ হবে। তাই অপারেশনের সময় যেকোন মূল্যে অপারেশন সফল করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনে তাদের প্রাণ দিতে হতে পারে। তাই প্রশিক্ষণের শুরুতেই প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীদের ছবিসহ একটি সম্মতিসূচক ফর্মে স্বাক্ষর নেয়া হতো।ফর্মে লেখা থাকতো যে, আমি দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বিসর্জন দিতে সম্মত হয়েই এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছি, আর যুদ্ধে আমার মৃত্যু ঘটলে কেউ দায়ী থাকবে না। [১০]

নৌ-কমান্ডোদের ঐ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় নেভাল অফিসার কমানডার এম.এন.সামানত, ও ট্রেনিং দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন লেঃ কমান্ডার জি এম মার্টিস, এবং আরও ভারতীয় ২০ জন প্রশিক্ষক তারা হলেনন লেঃ দাস, লেঃ ভি.পি. কফিল। প্রশিক্ষকদের মধ্যে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে আসা ৮ জন সাব-মেরিনার ছাড়াও আরো ছিলেন ভারতীয় নৌ-বাহিনীর লিডিং সি,মান কে.সিং, লিডিং সি,মান গুপ্ত, এল সিং, মারাঠি নানা বুজ এবং সমীর কুমার দাশসহ আরো কয়েকজন।[৭]

ট্রেনিং এর দুটো অংশ ছিল। সবাইকে প্রয়োজনীয় স্থলযুদ্ধ যেমনঃ- গ্রেনেড নিক্ষেপ, এক্সপ্লোসিভের ব্যবহার, স্টেনগান রিভলবার চালানো, আন-আর্মড কমব্যাট(খালি হাতে যুদ্ধ) ইত্যাদি শিখতে হতো। আর জলযুদ্ধের ট্রেনিঙের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের সাতার যেমনঃ- বুকে ৫-৬কেজি ওজনের পাথর বেধে সাতার, চিৎ সাতার, কোন মতে পানির উপরে নাক ভাসিয়ে একটানা অনেক্ষন সাতার, পানিতে সাতরিয়ে এবং ডুব সাতার দিয়ে লিমপেট মাইন ব্যবহার, স্রোতের প্রতিকূলে সাতার, জাহাজের কেবল ভাঙা ইত্যাদি কঠিন সব প্রশিক্ষণ দেয়া হত তীব্র খরস্রোতা ভাগীরথী নদীতে। শীত-বর্ষায় একটানা ৪৮ ঘণ্টা পানিতে থাকার অভ্যাস করতে হয় সব যোদ্ধাকে।[১১] প্রায় টানা তিন'মাস ট্রেনিং এর পর আগস্টের প্রথম সাপ্তাহে তাদের ট্রেনিং শেষ হয়।

অপারেশনের বর্ণনা[সম্পাদনা]

যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের শেষদিকে এসে আক্রমণের পরিকল্পনা সাজানো হতে থাকে। একই সাথে একই সময়ে দুই সমুদ্র বন্দর ও দুই নদী বন্দরে আক্রমণ চালানোর জন্য চার সেক্টরের পরিকল্পনার সমন্বয় ঘটানো হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম ব্যাচকে চার স্থানে আক্রমণের উদ্দেশ্যে মোট চারটি দলে ভাগ করা হয়েছিল। ৬০ জনের ২টি দল এবং ২০ জনের আরো ২টি দল। চারটি দলের চারজন লিডার ঠিক করে দেয়া হয়েছিল। টিম লিডারদের অপারেশন পরিচালনার জন্য শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল বিশেষ গোপনীয় পদ্ধতি যা টিমের অন্যান্য সদস্যদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল।[৭] টিম কমান্ডারদের বলা হয়েছিল যে, দুটি বাংলা গানকে সতর্ক সঙ্কেত হিসেবে ব্যবহার করা হবে। গান দুটি প্রচার করা হবে কলকাতা আকাশবানীর পক্ষ থেকে পূর্বাঞ্চলীয় শ্রোতাদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানে সকাল ৬টা থেকে ৬:৩০ মিনিট অথবা রাত ১০:৩০ মিনিট থেকে রাত ১১টায়। এই ফ্রিকোয়েন্সির নাম ও গান দুইটি শুধু টিমের কমান্ডারই জানতো।[৯] গান দুটি অথবা তাদের সঙ্কেত হলোঃ-

  1. প্রথম সংকেত ছিল পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া "আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান"এর অর্থ হল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আক্রমণ করতে হবে বা আক্রমণের সময় কাছাকাছি।
  2. সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এর গাওয়া গান "আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ি" গানটি ছিলো দ্বিতীয় সংকেত যার অর্থ আক্রমণের জন্য ঘাঁটি ত্যাগ কর। অর্থাৎ সুস্পষ্ট নির্দেশ আক্রমণ করতেই হবে।[৯][১২]
দলগুলোর বর্ণনা[৭]
দল নং প্রধানের নাম সদস্য সংখ্যা গন্তব্যস্থল
দল ১ সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী ৬০ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর
দল ২ নৌ-কমান্ডো আমিনুর রহমান খসরু ২৬০ (৬০ জন নৌ কমান্ডো ও ২০০ জন সি আন্ড সি কমান্ডো) মংলা সমুদ্র বন্দর
দল ৩ সাবমেরিনার বদিউল আলম ২০ চাঁদপুর নদী বন্দর
দল ৪ সাবমেরিনার আবদুর রহমান ২০ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর

যাত্রা শুরু হয়েছিল পলাশির হরিনা ক্যাম্প থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, তারা একযোগে পৌছে যাবেন স্ব স্ব এলাকা চট্টগ্রাম,মংলা, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ।তারা যাত্রা করার সময় তাদেরকে প্রয়োজনীয় অস্ত্র দিয়ে দেয়া হয়। প্রত্যেক নৌ-কমান্ডোকে একটি করে লিমপেট মাইন,ছুরি,একজোড়া সাঁতারের ফিন আর কিছু শুকনো খাবার দেয়া হয়। প্রতি তিন জনের জন্য একটি করে স্টেনগান এবং কমানডারদের দেয়া হয় একটি করে ট্রানজিস্টার। অপারেশনের দিন ধার্য করা হয়েছিল ১৫ আগস্ট, ১৯৭১। এখানে অপারেশন গুলোর বর্ণনা দেয়া হলঃ

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর অপারেশন[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশন পরিচালিত হয় ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে অর্থাৎ ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে। হরিনা ক্যাম্প থেকে আগত ৬০ জনের দলকে ২০ জন করে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। ১ ও ২ নং দল তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ভিন্ন ভিন্ন পথ ধরে চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট বেইজ ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং ১৪ আগস্ট তারা প্রথম গানের সংকেত পায়। এই সংকেত পাবার পর তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কর্ণফুলী নদীর পূর্বতীরে চরলক্ষ্যায় তাদের বেইজ ক্যাম্পে পৌছায়। ৩য় দলটির তখনো কোন খবর পাওয়া যায় নি। এরপর ১৫ আগস্ট তারা ট্রানজিস্টারে চূড়ান্ত সংকেত পায়, এবং অপারেশনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। এ অপারেশনে ৩১ জন কমান্ডো যোদ্ধা অংশ নেয়। ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে রাত ১টায় নৌ-কমান্ডোরা তাদের অপারেশনের জন্য যাত্রা করে। রাত ১টা ১৫ তে তারা পানিতে নেমে জাহাজের উদ্দেশ্যে সাঁতরানো শুরু করে, এবং বেশ দ্রুততার সাথে নিজ নিজ বাছাইকৃত টার্গেট জাহাজসমূহের গায়ে মাইন লাগিয়ে সাঁতার কেটে সরে পরে। রাত ১টা ৪০ মিনিটে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর একে একে সব গুলো মাইন বিস্ফোরিত হয়।[৯] এ সফল অপারেশনে তিনটি বড় অস্ত্রবাহী জাহাজ এবং বড় জাহাজ গুলো হলোঃ

  1. এম ভি হরমুজ- এটি ১৪ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ৯৯১০ টন অস্ত্রসম্ভারবাহী এই জাহাজটি ১৩ নং জেটিতে নোঙর করা ছিল।
  2. এম ভি আল-আব্বাস- এটি ১০৪১৮ টন সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ৯ আগস্ট ১২ নং জেটিতে অবস্থান নেয়।
  3. ওরিয়েন্ট বার্জ নং ৬ - এটি ৬২৭৬ টন অস্ত্র, গোলাবারুদ নিয়ে ফিস হারবার জেটির সামনে অবস্থান করছিল।

মংলা সমুদ্র বন্দর অপারেশন[সম্পাদনা]

২৭শে জুলাই ১৯৭১ সনে,৬০ জন নৌ- কমান্ডো ও ২০০ জন বাংলাদেশী সি আন্ড সি বিশেষ কমান্ডো দল আমিনুর রহমান খসরুর নেতৃত্বে ভারতের কানিং মাতলার বন্দর থেকে মংলা অপারেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সুন্দর বনের গভীর জঙ্গল পাড়ি দিয়ে কমান্ডো দলটি ১৩ ই আগস্ট ১৯৭১ সনে সন্ধা ৬ টায় মংলা বন্দর এ পৌঁছায়। ২৬০ জনের কমান্ডো দলটি মংলা বন্দর ও ডাংমারি বিলের পিছনে, পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে মংলার দূরত্ব ডাংমারি বিলের মাঝ দিয়ে ৬ মাইল,নৌকায় পৌঁছোতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। ১৫ই আগস্ট,৭১ এ রেডিও মারফত একশন গান বাজার পর তারা পরম করুনাময় আল্লাহ`র কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল অপারেশনের সাফল্যের জন্য বিশেষ দোয়া করেন। ঠিক রাত ১২টায় কমান্ডোরা ১৫টি নৌকায় মংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। মংলায় পৌঁছানোর শেষ সময় নির্ধারিত ছিল রাত ২ টা কিন্তু পথ পরিদর্শকের ভুল পরিচালনায় কমান্ডোরা নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে মংলা বন্দরে পৌঁছায়। ইতোমধ্যে অপারেশনের নকশা মাফিক বাংলাদেশের সব নদী ও সমুদ্র বন্দরে অপারেশন শেষ। এ অপারেশন শুধু মাত্র জীবনের ঝুঁকিই নয় বরং মংলার ১৬ আগস্ট , ১৯৭১ ভোরের এ অপারেশন ছিল সরাসরি একটি সুইসাইড একশান। সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে ভোর ৪:৩০ মিনিটে মংলা অপারেশন শুরু হয়,অপারেশন চলা কালে ২০০ জন সি আন্ড সি বিশেষ কমান্ডো দল, হেভি মেশিন গান, মেশিনগান, এনরগা সহকারে ৩ জনের ছোট ছোট দল করে, ৬৬টি উপদলে বিভক্ত হয়ে , নৌ-কমান্ডোদের ছাউনি দিতে (কভারিং দিতে) মংলা বাঁধের পিছনে অবস্থান নেন। অপারেশন চলাকালে, সি আন্ড সি কমান্ডো দলের উপ-কমান্ডার রাজা ও খিজির জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌ-কমান্ডোদের সহযোগিতায় মেশিনগান নিয়ে পশুর নদীর হাঁটু পানিতে নেমে আসেন। সময়ের অভাবে শুধুমাত্র ২৪ জন নৌ-কমান্ডো এ অভিযানে অংশ নিতে পেরেছিলেন। ৬টি উপদলে বিভক্ত হয়ে ২৪ জন নৌ-কমান্ডো ৬টি বিদেশী জাহাজে মাইন লাগান, ভোর ৬:৩০ মিনিট থেকে নৌ-কমান্ডোদের লাগানো মাইন বিকট শব্দ করে ফাটতে শুরু করে। ৩০ মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ৪টি বিমান মংলা বন্দরের উপরে ঘুরতে দেখা যায়। আক্রান্ত জাহজগুলির মধ্য একটি সোমালীয়, একটি মার্কিন, ২টি চীনা, ১টি জাপানি ও ১টি পাকিস্তানি জাহাজ। এ অপারেশনে আক্রান্ত মোট ৬টি বিদেশী জাহাজই ধ্বংস হয় এবং ৩০,০০০ হাজার টন গোলা-বারুদ ও যুদ্ধের সরঞ্জাম সহকার ধীরে ধীরে পশুর নদীতে নিমজ্জিত হয়।[১৩] মংলা অপারেশন কমান্ডার আমিনুর রহমান,খসরু ও আরও ২ জন নৌ- কমান্ডো এ অপারেশনে মংলা বন্দর এর অতিরিক্ত বাধা পার হয়ে অসীম সাহসিকতার সাথে সোমালীয় ৭,০০০ হাজার টনের অস্ত্রসম্ভারবাহী জাহাজ এস,এস,লাইটং-এ মাইন লাগান এবং এস.এস. লাইটং-কে ধ্বংস করেন।[১৪] এই অপারেশনে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা নিখোঁজ হন, ধারণা করা হয় তারা স্রোতের টানে ভেসে গেছেন অথবা মারা গেছেন।

চাঁদপুর নদী বন্দর অপারেশন[সম্পাদনা]

 
পত্রিকায় চাঁদপুর নদী বন্দর অপারেশনের ছবি

এটিও ১৯৭১ এর ১৫ আগস্ট মধ্যরাত বা ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে হয়েছিল। এ অপারেশনে ১৮ জন নৌ-কমান্ডো অংশ নেন। এ গ্রুপের ১৮ জনকে তিনজন করে মোট ৬টি ছোট দলে ভাগ করা হয়।[৭] এই অভিযানে মাইন বিস্ফোরণে ২টি স্টিমার, গমবাহী একটি জাহাজ সহ ছোট বড় আরো অনেকগুলো নৌযান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।[৭]

নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর অপারেশন[সম্পাদনা]

এটিও ১৯৭১ এর ১৫ আগস্ট মধ্যরাত বা ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে হয়েছিল। এ অপারেশনে মোট ৪টি জাহাজ ও বেশ কয়েকটি নৌযান নৌ কমান্ডোরা ধংস করেন। শহরের মাঝে এ অপারেশনে কমান্ডোরা বিশেষ সাহসকতার পরিচয় দান করেন। এ অপারেশনে মোট ২০ জন কমান্ডো অংশ নেন।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ[সম্পাদনা]

১৫ আগস্টের ঐ অপারেশনগুলোতেই প্রায় ২৬টি জাহাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং আরো অনেক নৌযান ক্ষতিগ্রস্থ হয়।[১২] আগস্ট মাসের এসব অপারেশন ছাড়াও আগস্ট-নভেম্বর মাসব্যাপী আরো অনেকগুলো নৌ-কমান্ডো অপারেশন পরিচালনা করা হয়। এসব অপারেশনে পাকিস্তানি বাহিনীর আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হলঃ

  1. প্রায় সর্বমোট ৫০৮০০ টন জাহাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও নিমজ্জিত।
  2. ৬৬০৪০ টন জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত।
  3. এবং বেশ কিছু সংখ্যক পাকিস্তানি নৌযান বাংলাদেশী নৌ-কমান্ডোদের হস্তগত।[১৫]

অপারেশনের মূল্যায়ন[সম্পাদনা]

নৌ কমান্ড মিশনগুলোর সবগুলোই কিন্তু সাফল্যের মুখ দেখেনি। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের পর পাহারা শক্তিশালী করায় চট্টগ্রামে আর কোন অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি,[১৬] যার ফলে চারবার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংস করার চেষ্টা করা হলেও তা বিফলে যায়।[১৭] কয়েকটি কমান্ডো দল শত্রুপক্ষের এম্বুশের কবলে পড়ে তাদের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।[১৮] দূর্ভাগ্য ও ভুল হিসাবের কারণেও কিছু অভিযান বিফল হয়।[১৯] শত্রুপক্ষ তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, ফরিদপুর এবং চট্টগ্রাম এর তেলের ডিপোগুলো স্যাবোটাজ করা সম্ভব হয়নি। যদিও পরবর্তীকালে মুক্তিবাহিনী হেলিকপ্টার এবং টুইন অট্টার বিমানের সাহায্যে ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম এবং নারায়ণগঞ্জের তেল ডিপো দুটো ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।

মোট ৫১৫ জন কমান্ডো সিটুপি (C2P) থেকে প্রশিক্ষন নেন। আটজন কমান্ডো শহীদ হন, ৩৪ জন আহত হন এবং আগস্ট-ডিসেম্বরের মাঝে ১৫ জন কমান্ডো শত্রুর হাতে ধরা পড়েন।[২০] এই সময় কালের ভেতর নৌ কমান্ডোরা প্রায় ১২৬ টি জাহাজ/কোস্টার/ফেরি নষ্ট বা ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হন, এবং এক সূত্র মোতাবেক অগাস্ট-নভেম্বর ১৯৭১ এই সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৬৫টি বিভিন্ন ধরনের নৌযান (১৫ টি পাকিস্তানি জাহাজ, ১১ টি কোস্টার, ৭ টি গানবোট, ১১ টি বার্জ, ২ টি ট্যাংকার এবং ১৯টি সাধারণ নৌযান) [২১] তারা ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হন। কমপক্ষে ১০০,০০০ টন নৌযান ডুবিয়ে বা বিকল করে দেয়া হয়, জেটি এবং বন্দর অকার্যকর করে দেয়া হয় এবং চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। কোনো নিজস্ব সামরিক নৌযান না থাকা সত্ত্বেও, নৌ কমান্ডোরা তদানিং পুর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) নৌপথকে একরকম নিজেদের দখলেই রেখেছিলো।[২২]

শহীদ নৌ-কমান্ডো[সম্পাদনা]

  • কমান্ডো আব্দুর রাকিব, ফুলছড়ি ঘাট অপারেশনে শহীদ হন[২৩]
  • কমান্ডো হোসেইন ফরিদ, চট্টগ্রামে দ্বিতীয় অপারেশন চলাকালীন সময়ে পাক বাহিনীর হাতে শহীদ হন।[২৩]
  • কমান্ডো খবিরউজ্জামান, ফরিদপুরের দ্বিতীয় অপারেশনে শহীদ হন[২৩]
  • কমান্ডো সিরাজুল ইসলাম, এম আজিজ, আফতাব উদ্দিন এবং রফিকুল ইসলাম অপারেশন চলাকালীন নিখোঁজ হন।[২৩]

খেতাব পাওয়া নৌ-কমান্ডোদের নাম[সম্পাদনা]

অপারেশন হটপ্যান্ট[সম্পাদনা]

১৬ অগাস্ট এর অপারেশনের পর, সকল কমান্ডো ভারতে ফেরত যায়। এর পরে নৌ-কমান্ডোরা আর কোন পূর্ব-পরিকল্পিত এবং একযোগে অভিযান পরিচালনা করেননি। তার বদলে, ছোট ছোট দল পাঠানো হতো কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানতে, এবং সুযোগ পেলেই কমান্ডোরা সেখানে আক্রমণ চালাতেন।

মেজর জলিল, মুক্তিবাহিনীর সেক্টর ৯-এর কমান্ডার, অগাস্ট মাসে তত্কালীন বাংলাদেশ সরকার প্রধান তাজউদ্দীন আহমদ কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছিলেন একটি নৌ ইউনিটের গোড়াপত্তন করার[২৪] এবং সেই মোতাবেক কমান্ডার এম এন সামান্থ এর কাছে ৪টি গানবোটের জন্য আবেদন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবার মাসে কোলকাতা বন্দর ট্রাস্ট ২টি টহলযান (অজয় এবং অক্ষয়) মুক্তিবাহিনীকে দান করে। ৩৮ লাখ ভারতীয় রুপি খরচায় নৌযান দুটি ক্ষিদিরপুর ডকইয়ার্ডে একমাস ধরে মেরামত করা হয়[২৫] যা পরবর্তীতে ২ টি কানাডিয়ান ৪০X৬০ মিমি বোফর গান এবং ২টি হালকা ইঞ্জিন এবং ৮ টি গ্রাউন্ড মাইন (ডেকের দুই পাশে চারটি করে) এবং উপরন্ত আরো ১১টি গ্রাউন্ড মাইন দ্বারা সজ্জিত করা হয়।[২৬] তাদের নতুন নাম দেয়া হয় বিএনএস পদ্মা এবং পলাশ, এবং তাতে মোট ৪৪ জন বাঙ্গালী নাবিক এবং ১২ জন নৌ-কমান্ডো ছিলেন। জাহাজ দুটোর নেতৃত্বে ছিলেন ভারতীর নৌবাহিনীর সদস্যরা এবং মুক্তিবাহিনীর কাছে তা পুরোপুরি হস্তান্তর করা হয় ৩০ অক্টোবর, ১৯৭১ সাল। প্রবাসী বাংলাদেশে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন কামরুজ্জামানের উপস্থিতিতে কোলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট চেয়ারম্যান পি কে সেন জাহাজ দুটো কমিশন করেন। লেঃ কমান্ডার কেপি রায় এবং কে মিত্র ছিলেন জাহাজ দুটোর কমান্ডে নিয়োজিত। বাংলাদেশে নবগঠিত এই নৌবাহিনীর উদ্দেশ্য ছিলো:[২৭]

  • চালনা প্রবেশমুখ মাইন দ্বারা উড়িয়ে দেয়া
  • পাকিস্তানি জাহাজের উপর হামলা চালানো

ভারতীয় নৌবাহিনীর ফ্রিগেটের প্রহরায়, নভেম্বরের ১০ তারিখ জাহাজদুটি সফলভাবে মংলা বন্দরের প্রবেশমুখে মাইন দ্বারা আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়। তার পরদিনই ১১ নভেম্বর , ১৯৭১ এ তারা ব্রিটিশ জাহাজ "দ্যা সিটি অফ সেইন্ট এলব্যান্স" কে মংলা বন্দর থেকে তাড়াতে সক্ষম হয়।[২৮]



 
 
Today, there have been 1 visitors (1 hits) on this page!
This website was created for free with Webme. Would you also like to have your own website?
Sign up for free